নতুন এক ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। মিয়ানমারকে হারিয়ে তারা প্রথমবারের মতো নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। শুধু এখানেই নয়, এই অর্জন বাংলাদেশ নারী ফুটবলের সামনে খুলে দিয়েছে আরও বড় দুই মঞ্চে ওঠার সম্ভাবনা—২০২৭ সালের ফিফা নারী বিশ্বকাপ ও ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক।
এই সাফল্যের পরপরই নতুন করে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এশিয়ান কাপে সেরা ছয়ে জায়গা করে নিতে পারলে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট মিলবে। কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছালেই থাকবে এই দৌড়ে টিকে থাকার সুযোগ। তাই এখন থেকেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতির ছক কষা।
নারী ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে বরাবরের মতো এবারও আশাবাদী বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। আজ সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, “২০২৬-এর মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপ হবে। সেখানেও আমাদের অনেক সুযোগ আছে। সেরা ছয়টি দল চলে যাবে বিশ্বকাপে। দুটি দল আবার খেলবে অলিম্পিকে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে সেরা ছয়ে থাকার। আমাদের তো অনেক বড় স্বপ্ন, বিশ্বকাপ খেলা। সেটার জন্যই আমরা মাঠে নামব, সেটা জন্যই কাজ করব।”
২০২৬ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় বসবে ১২ দলের এশিয়ান কাপের আসর। তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে দলগুলো। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপদের সঙ্গে সেরা দুই তৃতীয় দল উঠবে কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখান থেকে চার সেমিফাইনালিস্ট সরাসরি পাবে বিশ্বকাপের টিকিট। আর কোয়ার্টারে হেরে যাওয়া চার দলের মধ্যে দুটি পাবে বাছাইয়ের আরেকটি সুযোগ।
তবে এমন বড় মঞ্চে ভালো কিছু করতে হলে দরকার কঠোর প্রস্তুতি—এটি ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন কিরণ, “আগামীকাল-পরশুর ভেতরে আমি বাফুফে সভাপতির সঙ্গে কথা বলব। অবশ্যই পরিকল্পনা আছে। কারণ সুযোগ বারবার আসে না। আমাদের যেহেতু সুযোগ এসেছে আমরা সেটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করব। আমরা অবশ্যই আরও শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলতে চাই। কারণ এশিয়ান কাপে অনেক শক্তিশালী দেশ খেলবে। জাপান, কোরিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া থাকবে। তাই সেই প্রস্তুতি নিয়েই আমাদের যেতে হবে। যে কয় মাস পাব, আমি সেটাকে সেভাবে ব্যবহার করব।”
বাংলাদেশের এই অর্জনের অন্যতম নায়ক ঋতুপর্ণা চাকমা। তার জোড়া গোলেই মিয়ানমারকে হারায় লাল-সবুজের মেয়েরা। তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। তাকে বাংলাদেশি মেসি আখ্যা দিয়ে কিরণ বলছেন, “ঋতুপর্ণা বাংলাদেশের মেসি। হামজাও ভালো ফুটবলার কোনো সন্দেহ নেই। হামজাও আমাদের দেশের জন্য গর্বের। সামনে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আছে আমার বিশ্বাস সেখানেও হামজা ভালো করবে। ছেলে-মেয়ে দুটো দলই আমাদের, তুলনা করার কিছু নেই। কিন্তু ঋতু আমাদের মেসি, এটার বলার অপেক্ষা নেই। ও যেভাবে বল টেনে নিয়ে যায়, মেসির মতোই।”
কোচ বাটলারও ঋতুপর্ণার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বলেছেন, এই ফরোয়ার্ড এশিয়ার শীর্ষ লিগে খেলার যোগ্যতা রাখেন। তবে বিদেশি ক্লাবে খেলানোর ক্ষেত্রে বাফুফের বড় ভূমিকা নেই বলে জানালেন কিরণ, “এই যে অফারগুলো আসে এটা কিন্তু আমরা যোগাযোগ করে ওইভাবে নিয়ে আসতে পারব না। ওটা সম্ভব না। যখন অস্ট্রেলিয়াতে যাবে, ঋতুপর্ণা এই লেভেলে খেললে তখন দেখবেন ইউরোপিয়ান ক্লাব থেকে ওর কাছে অফার আসবে। বিভিন্ন দেশ থেকে অফার আসবে। খেলোয়াড়দের খেলাগুলো মানুষের দেখতে হবে। মানুষ যখন খেলা দেখবে তখন অফার আসবে।”
প্রসঙ্গত, যেই কোচ পিটার বাটলারকে নিয়ে আগে নারী ফুটবলারদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিল, সেই কোচই এখন প্রশংসিত হচ্ছেন সাফল্যের পেছনের কারিগর হিসেবে। কিরণ বলেন, “ধন্যবাদ পিটার বাটলারকে। সে অনেক ভালো কোচ এবং সে জানে ডাগআউটে থেকে কীভাবে দলকে এগিয়ে নিতে হবে সে এই কাজটাই করেছে। তার সঙ্গে আমার অনেকবার কথা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও আমরা সেভাবে এগিয়ে যাব।”
নারী ফুটবলের এই জয় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে এসেছে। এখন প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা। সামনে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিকের মতো মঞ্চ—ঋতুপর্ণাদের হাত ধরে সেই স্বপ্নপূরণও হয়তো অসম্ভব নয়।