বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। এরপরও নারী ফুটবলকে আরও বিকশিত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে ফিফা। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৫-২৮ মেয়াদে নারী ফুটবলের জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যার নাম দিয়েছে ‘এমপাওয়ার হার (Empower Her)’। এই উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে আজ (রোববার) ঢাকায়, ফিফার এশিয়ান অঞ্চলের নারী ফুটবলে উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান সাইমন এন্থোনির উপস্থিতিতে।

বাংলাদেশের ফুটবল মানেই এখন নারী ফুটবলারদের সাফল্যের গল্প। বয়সভিত্তিক থেকে শুরু করে সিনিয়র দল—সব জায়গাতেই তারা এনে দিচ্ছেন ট্রফি। অনুষ্ঠানে বাফুফে নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণের বক্তব্যের পর নারী ফুটবলারদের সাফল্য নিয়ে একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এরপর মঞ্চে উঠে ফিফার কর্মকর্তা সাইমন এন্থোনি তুলে ধরেন নারী ফুটবল উন্নয়নের ফিফার নতুন চার বছর মেয়াদি পরিকল্পনা।

আগে তিন বছর মেয়াদে চলা এই উন্নয়ন পরিকল্পনাকে সম্প্রতি পরিবর্তন করে ২০২৫-২৮ সময়সীমায় রূপ দিয়েছে ফিফা। এই মেয়াদে সংস্থাটির লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে ৬০ মিলিয়ন নারীকে ফুটবলে সম্পৃক্ত করা এবং নারী কোচের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা। এন্থোনি জানান, “বর্তমানে নারী-পুরুষ লিগ মিলিয়ে নারী কোচের সংখ্যা মাত্র ২২ শতাংশ। আমরা আগামী চার বছরে এই সংখ্যা অনেক বাড়াতে চাই।”

নারী ফুটবলার ও কোচের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি টুর্নামেন্ট আয়োজন ও স্পন্সরশিপ বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে ফিফার। বাংলাদেশে এসে এই কর্মসূচি উপস্থাপন করার কারণ জানিয়ে সাইমন বলেন,“এশিয়ার প্রধান হিসেবে আমি বিভিন্ন দেশে নারী ফুটবল উন্নয়নের বিষয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ নারী ফুটবলে সাম্প্রতিক সময়ে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। তাই এখানে এসে ফিফার লক্ষ্য ও পরিকল্পনা সরাসরি ভাগ করে নিতে চেয়েছি, যাতে বাফুফে ও ফিফা একসঙ্গে নারী ফুটবলকে আরও এগিয়ে নিতে পারে।”

ফিফার এই উদ্যোগে অংশ নিতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, “নারী ফুটবলে আমাদের ক্লাব সংখ্যা এখনো কম। আমরা ঘরোয়া লিগ বাড়ানো ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টা করব। ফিফা আমাদের টেকনিক্যাল ও আর্থিক সহায়তা দেবে।” যদিও বাফুফে এখনো ২০২৫-২৮ মেয়াদের জন্য নিজেদের পরিকল্পনা প্রকাশ করেনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো সেসা, মরক্কো দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। মরক্কো দূতাবাসের প্রতিনিধি জানান, “বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উন্নয়নে মরক্কো সবসময় পাশে থাকবে।” আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের সাফল্য সত্যিই প্রশংসনীয় ও গর্বের।”

নারী ফুটবলের পৃষ্ঠপোষক ঢাকা ব্যাংকও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, “নারী ফুটবলের সঙ্গে থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নারী দলের তারকা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা ফিফা কর্মকর্তার হাতে বাংলাদেশের জার্সি তুলে দেন। পরে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের খেলোয়াড় ও বাফুফে কর্মকর্তারা ফিফা প্রতিনিধির সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।

নারী ফুটবলারদের সুরক্ষা নিয়েও গুরুত্বারোপ করেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, “আমরা শুধু খেলার মান উন্নয়নেই নয়, নারী হিসেবে তাদের নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছি। কেউ সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে বা হ্যারেসমেন্টের ঘটনায় আমরা আইনি পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”

সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটার জাহানারা আলমের যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গেও তাবিথ আউয়াল বলেন, “যে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ হলে আমরা সরকারের সহায়তা নেব। বাফুফের ডিসিপ্লিনারি, প্লেয়ার স্ট্যাটাস ও আপিল—এই তিনটি স্বাধীন কমিটি বিষয়টি বিচার করবে। এমনকি আমার বিরুদ্ধেও অভিযোগ এলে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।”

‘এমপাওয়ার হার’ উদ্যোগের মাধ্যমে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ নারী ফুটবল। ফিফার পরিকল্পনা ও বাফুফের প্রতিশ্রুতি মিলিয়ে ভবিষ্যতে আরও উজ্জ্বল সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে দেশের নারী ফুটবল।

Previous articleহামজা ঢাকায়, কাল যোগ দেবেন অনুশীলনে
Next articleরবির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হচ্ছেন হামজা চৌধুরী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here