বাংলাদেশ ফুটবলে দীর্ঘদিন ধরে একটি বড় সমস্যা হলো গোল করার ব্যর্থতা। ভারতের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত ম্যাচেও সেই সমস্যা প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে এই ম্যাচে জয় পাওয়া অসম্ভব ছিল না। অথচ, এমন ম্যাচে ঘরোয়া লিগের সেরা বাংলাদেশি গোলদাতা হয়েও এক মিনিটও খেলার সুযোগ পাননি মোহাম্মদ আল-আমিন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এই মৌসুমে মাত্র ৭৩ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছেন শেখ মোরসালিন, কিন্তু তারপরও ভারতের বিপক্ষে একাদশে ছিলেন তিনি। জাতীয় দলের হয়ে ৫ গোল থাকলেও, ভারতের বিপক্ষে তাকে সেভাবে দেখা যায়নি। পুরো ম্যাচে ছিলেন নিস্প্রভ, গোলের সুযোগ তৈরি করতেও ব্যর্থ ছিলেন। তার পারফরম্যান্সে জাতীয় দলের একাদশে জায়গা পাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ম্যাচের প্রথম ২০ সেকেন্ডেই ফাঁকা পোস্টে গোল মিস করেন মজিবুর রহমান জনি। এরপরও একের পর এক সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন তিনি। তার ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে দাপট দেখিয়েও জয়ের মুখ দেখেনি, বরং ড্রতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। জনির এমন বাজে ফিনিশিংয়ে দল যে বড় সুযোগ হাতছাড়া করেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আল-আমিনের পারফরম্যান্সের দিকে তাকালে দেখা যায়, এবারের লিগে ১০ ম্যাচে ৭ গোল করেছেন তিনি, যা বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফেডারেশন কাপেও তার ঝুলিতে রয়েছে ২ গোল। দারুণ ফর্মের জন্যই প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। কিন্তু কোচ ক্যাবরেরা তাকে এক মিনিটের জন্যও মাঠে নামাননি।
বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় সমস্যা গোল স্কোরিং, যা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও প্রমাণ হয়েছে। নতুন করে দলে যোগ দেওয়া হামজা চৌধুরীর অভিষেক ম্যাচেও বাংলাদেশ জিততে পারেনি মূলত ফিনিশিং দুর্বলতার কারণে। কোচ ক্যাবরেরা পাঁচটি পরিবর্তন করলেও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারা আল-আমিনকে খেলানোর প্রয়োজন মনে করেননি। তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন,
‘আল আমিন প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়। আজ কম্বিনেশনের সঙ্গে আল আমিন সামঞ্জস্য ছিল না।’
তিনি আরো বলেন,
‘আল-আমিন ট্রেনিংয়ে অনেক ভালো করেছিলো এবং সেজন্যই সে স্কোয়াডে ছিলো। আমি মনে করি এই স্কোয়াডে থাকাটাই তার জন্য অনেক বড় অর্জন। তবে বিপিএলের লেভেল আর এশিয়ান কাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ডের লেভেল এক না।’
কিন্তু কোচের এই যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য? যখন মোরসালিন ও জনি একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছিলেন, তখন আল-আমিনকে না নামানোর সিদ্ধান্ত একেবারেই অবিবেচনাপ্রসূত মনে হয়েছে। একজন কোচের কাজ হলো সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া, কিন্তু ক্যাবরেরা সেই ব্যর্থতাই বারবার দেখিয়ে যাচ্ছেন। তার কৌশলগত ভুলের কারণে বাংলাদেশ গোলের অভাবে ভুগছে, অথচ তিনি ফর্মে থাকা একজন স্ট্রাইকারকে উপেক্ষা করেই গেলেন।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, যখন গোল করার সমস্যাই বাংলাদেশের প্রধান বাধা, তখন লিগের সেরা বাংলাদেশি গোলদাতাকে একবারও সুযোগ না দেওয়া কি আদৌ যৌক্তিক? কোচ ক্যাবরেরার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক চলছেই।