হামজা চৌধুরি ও সামিত সোমের আগমনে মাঠের ফুটবলে যেমন নতুন জোয়ার এসেছে, তেমনি ফুটসালেও নতুন দিগন্তে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। সেই পথচলায় এশিয়ার অন্যতম সেরা ফুটসাল শক্তি ইরান থেকে কোচ এনে বড় স্বপ্ন দেখছে বাফুফে।
আজ (রবিবার) বিকেলে বাফুফে ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানি কোচ সাঈদ খোদারাহমিকে পরিচয় করিয়ে দেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। সাঈদের হাত ধরেই বাংলাদেশে ফুটসালের কাঠামোগত যাত্রা শুরু করতে চায় ফেডারেশন।
সংবাদ সম্মেলনে কোচ সাঈদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ফুটসালে এখনো শিশু। আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি যেখানে আমার শহরেই এক হাজার ফুটসাল স্টেডিয়াম আছে। ফুটসালের প্রিমিয়ার লিগ থেকে শুরু করে অনূর্ধ্ব-১২ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের লিগ হয় ইরানে। আমি চাই, বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে সেই কাঠামো গড়ে উঠুক।’
সাঈদ খোদারাহমি শুধু ইরানের কোচ নন, তিনি এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি)-এর স্বীকৃত ফুটসাল কোচ ও ইন্সট্রাকটর। তিনি পাঁচ বছর ধরে মিয়ানমারের জাতীয় ফুটসাল (নারী ও পুরুষ) দলের দায়িত্বে ছিলেন। তার কোচিংয়ে মিয়ানমার র্যাংকিংয়ে উন্নতি করে ১০৩ থেকে উঠে আসে ৮০ নম্বরে। সেই অভিজ্ঞতাই এবার তিনি কাজে লাগাতে চান বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে ফুটসালের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সাঈদ বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসি। মিয়ানমারেও এমন অবস্থায় শুরু করেছিলাম। পাঁচ বছরে অনেক উন্নতি করতে পেরেছি। আশা করি বাংলাদেশেও তা পারব।’
বাফুফের ফুটসাল কমিটির চেয়ারম্যান ইমরানুর রহমান জানান, ‘আমরা এখনো ফুটসালের র্যাংকিংয়ে নেই। তবে সাঈদের মতো কোচ পেলে দ্রুতই আন্তর্জাতিক মঞ্চে জায়গা করে নিতে পারব।’
ফুটসালের অবকাঠামোগত সংকটও সামনে এসেছে। স্ট্যান্ডার্ড ফুটবলের মতো ফুটসালের জন্যও আলাদা ভেন্যু নেই। আপাতত হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম ও মিরপুরের ইনডোর ভেন্যুই ভরসা। তবে বাফুফে সভাপতি জানান, ‘সরকার ও ফেডারেশন একসঙ্গে কাজ করে আমরা আলাদা অবকাঠামো গড়ার দিকে এগোব।’
ফুটসাল নিয়ে এবারই প্রথমবার বড় কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নামছে বাংলাদেশ। সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ায় এএফসি এশিয়ান কাপ ফুটসাল বাছাইয়ে অংশ নেবে জাতীয় দল। তিন মাসের জন্য সাঈদকে আনা হয়েছে এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে।
এ নিয়ে ইমরানুর রহমান বলেন, ‘আমরা ডেথ গ্রুপে পড়েছি। ইরান শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেও বাকি দুটি ম্যাচ জেতার লক্ষ্য থাকবে। কোচ ৫৩ জন খেলোয়াড় নিয়ে কাজ করবেন। সেখান থেকে ধাপে ধাপে ট্রায়ালের মাধ্যমে ২৪ জনকে বাছাই করে নিবন্ধন করব। চূড়ান্ত স্কোয়াডে থাকবেন ১৪ জন, যার মধ্যে ২ জন গোলরক্ষক ও ১২ জন ফিল্ড প্লেয়ার।’
আগস্টের ১৯ তারিখের মধ্যে সেই ২৪ জনের নাম এএফসিতে পাঠাতে হবে। তার আগে আরেক দফা ট্রায়াল নিয়ে হবে স্কোয়াড নির্ধারণ। সাঈদের অভিজ্ঞতা আর বাফুফের নতুন দৃষ্টিভঙ্গিই এবার ফুটসালে বাংলাদেশকে নতুন যুগে প্রবেশ করাতে পারে—এমন আশায় আছে দেশের ফুটবলপ্রেমীরা।