বাংলাদেশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় দুঃখ এখন একটাই—শেষ মুহূর্তে ভুলে জয় হাতছাড়া। নেপাল হোক বা হংকং, গল্পটা প্রায় একই। ম্যাচজুড়ে লড়াই, তারপর যোগ করা সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত গোল হজম। এ অভ্যাস এখন পরিণত হয়েছে ‘অসুখে’। ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচের আগে সেই রোগ নিরাময়ের পথ খুঁজছেন খেলোয়াড়রা। অনুশীলনের ফাঁকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এ নিয়ে নিজের ভাবনা জানালেন মিডফিল্ডার সমিত শোম।

এ এক কঠিন রোগ। কোনোভাবেই এই অসুখ নিরাময়ের উপায় খুঁজে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। পুরো ম্যাচের লড়াই নিমিষেই ধুলোয় মিশে যাচ্ছে শেষ মুহূর্তের ভুলে। জয়ের ম্যাচ ড্র কিংবা ড্র করা ম্যাচ হারতে হচ্ছে হাভিয়ার কাবরেরার দলকে। সমস্যা আসলে কোথায়—মানসিকতায়, কৌশলে, না অভিজ্ঞতার ঘাটতিতে?

সবশেষ নেপালের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে হামজা চৌধুরীর জোড়া গোলে ৯০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে গোল হজম করে ২-২ ড্র করেছে বাংলাদেশ। তার আগে অক্টোবরে হংকংয়ের বিপক্ষে ৩-৩ সমতায় শেষ হতে চলা ম্যাচে ইনজুরি টাইমের ১১তম মিনিটে গোল হজম করে ৪-৩ ব্যবধানে হারের তেতো স্বাদ পেয়েছিল লাল-সবুজ দল।

বারবার কেন এমন হৃদয়বিদারক মুহূর্তের স্বাক্ষী হতে হয় বাংলাদেশকে? আগামী মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচের আগে আজ অনুশীলন শেষে এ প্রশ্নের জবাব দিলেন মিডফিল্ডার শমিত শোম।

শমিতের মতে, ভাগ্যও অনেক সময় মুখ ফিরিয়ে থাকে বাংলাদেশের থেকে। তিনি বলেন,‘এটা ফুটবল, এখানে এগুলো হয়, তাই না? আর আমাদের লাকটা আমাদের দিকে যাচ্ছে না। শেষ ম্যাচে যে কর্নারটা নেপাল পেল, মনে হয় অফসাইডও ছিল। ফুটবল এভাবেই হয়। জানি না কেন বারবার এমন হচ্ছে।’

তবে কেবল ভাগ্যের ওপর দায় চাপাতে রাজি নন শমিত। মনোযোগের ঘাটতিকেও বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি—‘আসল একটা জিনিস হলো আমাদের ৯০ মিনিট পর্যন্ত ফোকাস ধরে রাখতে হবে। শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত মনোযোগ থাকতে হবে। ওই জায়গায় আমাদের আরও কাজ করতে হবে।’

শেষ মুহূর্তে লিড ধরে রাখার অভিজ্ঞতার অভাবকেও শমিত তুলে ধরলেন। তাঁর ভাষায়,‘আমরা যে শেষ তিন-চার-পাঁচ ম্যাচে খেলছি, বেশিরভাগই ছিল যে আমরা এগিয়ে ছিলাম। লিড ধরে রাখার অভিজ্ঞতা আমাদের কম। ম্যাচ শেষ করার কৌশল জানা জরুরি। আমি মনে করি একটু মাইন্ড গেম খেলতে হবে প্রতিপক্ষের সঙ্গে—সময় নষ্ট করার মতো কিছু। এসব আমরা এখনও শিখিনি, তবে আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা পাব, আর জিততে পারব।’

এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছেন বাংলাদেশ দলের কোচ হাভিয়ার কাবরেরাও। স্প্যানিশ এই কোচ জানিয়েছেন,‘আমরা ভুলগুলো বিশ্লেষণ করব, ভিডিও দেখে প্রস্তুতি নেব, যেন ভারতের বিপক্ষে এমন না ঘটে। হাতে চার দিন সময় আছে—এই সময়ে ভুলগুলো সংশোধনের চেষ্টা করব।’

ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তাই একটাই লক্ষ্য—শেষ মুহূর্তের ব্যাধি কাটিয়ে জয় দিয়ে মাঠ ছাড়তে শেখা।

Previous articleহামজার উপর ডকুমেন্টারি—জাতীয় স্টেডিয়ামে লেস্টার সিটির দুই প্রতিনিধি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here