নানা রকম উত্তেজনা, বিতর্ক আর শৃঙ্খলাভঙ্গের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশের ঘরোয়া ফুটবলের চলতি মৌসুম। মৌসুমের শেষ দিকে এসে বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি (বুধবার) তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক সভায় বসে। এই সভায় সাম্প্রতিক চারটি ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করে একাধিক শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাফুফে সিদ্ধান্ত গুলো প্রকাশ করে।
সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের শীর্ষস্থানীয় তিন ক্লাব বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব — তিনটিকেই আর্থিক জরিমানা গুণতে হবে। শুধু ক্লাব নয়, সংশ্লিষ্ট কিছু ফুটবলার ও কর্মকর্তাকেও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
আজ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ডিসিপ্লিনারী কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মেজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় কমিটির সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বেশ কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
গত ১২ এপ্রিল বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় বসুন্ধরা কিংস বনাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ম্যাচে মোহামেডান সমর্থকদের স্মোক ফ্লেয়ার প্রজ্জ্বলনসহ অন্যান্য শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের কারণে ক্লাবটিকে ১,২৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়। ২৬ এপ্রিল কুমিল্লায় আবাহনী বনাম মোহামেডান ম্যাচে ফের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় ক্লাবটিকে আরও ১,০০,০০০ টাকা জরিমানা ও কঠোর সতর্কবার্তা প্রদান করা হয়।
২ মে মোহামেডান বনাম পুলিশ এফসি ম্যাচে মোহামেডানের খেলোয়াড় এমেকা সানডে ও মো. সুজনকে সতর্ক করা হয়। একই ম্যাচে মোহামেডান সমর্থক মো. আওলাদ হোসেন (ইমাম) মাঠে ঢুকে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ধাক্কা দেওয়ায় তাকে এক বছরের জন্য স্টেডিয়াম নিষিদ্ধ করা হয় এবং ক্লাবকে ৫০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
বসুন্ধরা কিংসের সমর্থকদের একাধিকবার অশোভন আচরণে ক্লাবটিকে মোট ২,০০,০০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। ২ মে বসুন্ধরা কিংস বনাম আবাহনী ম্যাচে ক্লাবটির সহকারী কোচ মো. মাহবুব হোসেন রক্সি রেফারির অনুমতি ছাড়া মাঠে প্রবেশ এবং অশালীন অঙ্গভঙ্গির জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে ফুটবল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
একই ম্যাচে খেলোয়াড় সোহেল রানা লাল কার্ড পাওয়ায় তাকে পরবর্তী দুই ম্যাচে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ক্লাবের ম্যানেজার এস এম ওয়াসিমুজ্জামান এবং সাপোর্ট স্টাফ তামিমকেও অনুপযুক্ত আচরণের জন্য সতর্ক ও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। তামিম শিকারীকে ৬ মাস স্টেডিয়ামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ২৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, যা সময়মতো পরিশোধ না হলে দায়ভার ক্লাবকে বহন করতে হবে।
এছাড়া লাল কার্ড পেয়ে ম্যাচ কমিশনারের সাথে বাজে ব্যবহারের জন্য কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে সাদ উদ্দিনকে; সেই সাথে এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বাফুফের অধীনে হওয়া কোন ম্যাচ খেলতে পারবেন না সাদ।
ঢাকা আবাহনীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত ২ মে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আবাহনীর খেলোয়াড় শাহীন আহমেদকে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়। একই ম্যাচে আবাহনী সমর্থকদের অনভিপ্রেত আচরণের জন্য ক্লাবটিকে ১,০০,০০০ টাকা জরিমানা ও সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
এছাড়া বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় বারবার শৃঙ্খলাবিরোধী ঘটনার পুনরাবৃত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি সুপারিশ করেছে যে, কেন অবশিষ্ট হোম ম্যাচগুলো দর্শকশূন্যভাবে আয়োজিত হবে না, সে বিষয়ে বাফুফে সচিবালয় বরাবর যেন ব্যাখ্যা দেয়।
মাঠে ও মাঠের বাইরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে ডিসিপ্লিনারি কমিটি। ফুটবলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাকি থাকা মৌসুমে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।