পেশাদার ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে একের পর এক রেফারিদের ওপর আক্রমণের ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রা নিয়েছে। এখান থেকে প্রতি মৌসুমে দুটি ক্লাব বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে সুযোগ পায়। তবে মাঠের লড়াইয়ের পাশাপাশি এখন মাঠেই রেফারিদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে।
সর্বশেষ সিটি ক্লাব ও বাফুফে এলিট একাডেমির মধ্যকার ম্যাচে রেফারি জিএম চৌধুরী নয়ন মারধরের শিকার হন। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে যোগ করা সময়ে নয়ন সিটি ক্লাবের বিপক্ষে একটি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন, যাতে এলিট একাডেমি গোল করে ১-১ সমতা ফেরায়। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার পরপরই সিটি ক্লাবের কয়েকজন মাঠে ঢুকে তাকে ঘুষি মারতে শুরু করে।
ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রেফারি বলেন, “আমার অপরাধ কেন পেনাল্টি দিলাম। কিন্তু ওটা তো জেনুইন পেনাল্টি হয়েছে। ওই পেনাল্টিতে সিটি ক্লাব তিন পয়েন্ট নিতে পারেনি। এই ক্ষোভ আমার ওপর দিয়ে মিটিয়েছে। ওরা এক কর্মকর্তাসহ মাঠে ঢুকে আমার ওপর হামলা করে।”
এই ঘটনা চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে রেফারিদের ওপর হওয়া একাধিক আক্রমণের সর্বশেষ উদাহরণ। গত দুই সপ্তাহে এমন বড় আকারের তিনটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩০ এপ্রিল ফর্টিজ মাঠে পিডব্লিউডি ও ওয়ারী ক্লাবের ম্যাচে হাফ টাইমে দেখা যায়, কয়েকজন কর্মকর্তা রেফারির ওপর চড়াও হন। ওয়ারী ক্লাবের কর্মকর্তা কবীরকে দেখা যায় অত্যন্ত ঔদ্ধত্য আচরণে। রেফারির সঙ্গে বাজে ব্যবহার করায় প্রথমে হলুদ কার্ড, পরে লাল কার্ড পান তিনি। সহকারী রেফারির কাছ থেকে পতাকা কেড়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটে। আরেকটি ঘটনা ঘটে গাজীপুরে, ফরাশগঞ্জ ও পিডব্লিউডির মধ্যকার ম্যাচে। সেখানে ফরাশগঞ্জ ক্লাবের সদস্যরা রেফারির ওপর আক্রমণ করে।
কমলাপুর স্টেডিয়ামে নতুন টার্ফ স্থাপনের কাজ চলায় চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ বর্তমানে তিনটি মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর একটি পূর্বাচলের জলসিঁড়ি প্রকল্পের মাঠ। সেখানেই গতকাল নয়ন চৌধুরীর ওপর হামলা হয়। আঘাতে মাঠেই লুটিয়ে পড়েন তিনি এবং মাঠ ছাড়ার সময়ও তাকে মারধর করা হয়।
ঘরোয়া ফুটবলে এক সময় রেফারি প্রহার নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলেন, “তিনটি ঘটনাই ডিসিপ্লিনারি কমিটির কাছে রয়েছে। তারা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দ্রুত শাস্তি কার্যকর করবেন।”
বর্তমানে রেফারিরা ম্যাচ পরিচালনার সম্মানীর জন্য আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছেন। একদিকে ন্যায্য সম্মানী নিয়ে অসন্তোষ, অন্যদিকে মাঠে শারীরিক ও মানসিক লাঞ্ছনার শিকার — এই দ্বৈত চাপে তারা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাফুফের রেফারিদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় কার্যকর কোনো ভূমিকা চোখে পড়ছে না। একইভাবে বাংলাদেশ ফুটবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশন থেকেও কোনো প্রতিবাদ বা উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যা রেফারিদের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে।