ফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে রহমতগঞ্জকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। প্রথম কোয়ালিফায়ারে হারলেও দ্বিতীয় সুযোগ কাজে লাগালো ভ্যালেরিউ তিতা শিষ্যরা। শুরুতে পিছিয়ে পড়েও অতিরিক্ত সময়ের নাটকীয়তায় ফাইনালে পৌঁছালো কিংস। ২-১ গোলের জয়ে নির্ধারিত সময়ের খেলা ছিল ১-১ সমতায়। তবে অতিরিক্ত সময়ে তরুণ তুর্কি ইনসান হোসেন ফাইনালে নিয়ে গেছেন বসুন্ধরা কিংসকে।
ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট দেখায় বসুন্ধরা কিংস। তবে রহমতগঞ্জও সুযোগ পেলেই ভয়ংকর হয়ে ওঠার চেষ্টা চালায়। ম্যাচের ৪র্থ মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করে বসুন্ধরা কিংস। তবে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হুয়ান লেসকানোর হেড সহজেই ঠেকিয়ে দেন রহমতগঞ্জের অভিজ্ঞ গোলরক্ষক আহসান হাবিব বিপু। এরপর ৬ষ্ঠ মিনিটে আবারও আক্রমণে যায় কিংস। লেসকানোর পাস থেকে গাফুরভের কাটব্যাক পোস্টের সামনে পৌঁছালেও পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন রাকিব, হাতছাড়া হয় গোলের সুযোগ।
৮ম মিনিটে ভুল পাসের সুযোগ নিয়ে বল ক্লিয়ার করতে বক্স ছেড়ে আসেন বসুন্ধরার গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ। কিন্তু রহমতগঞ্জের ঘানার স্ট্রাইকার স্যামুয়েল বয়টেং বল নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই ডিফেন্ডার ডেসিয়েল বলটি ক্লিয়ার করে দলকে বিপদমুক্ত করেন। ১০ম মিনিটে রহমতগঞ্জের মিশরীয় মিডফিল্ডার মোস্তফা খারাবার নেওয়া দূরপাল্লার শট অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন শ্রাবণ। বল ক্রসবারে লেগে ফিরে এলে দ্বিতীয় প্রচেষ্টাতেও তা ঠেকিয়ে দেন এই তরুণ গোলরক্ষক।
২৫তম মিনিটে বসুন্ধরা কিংস আবারও আক্রমণে যায়। ইভান্স ইত্তির বাড়ানো একটি নিখুঁত ক্রসে হেড করতে ব্যর্থ হন লেসকানো, ফলে আবারও হাতছাড়া হয় সম্ভাব্য গোল। প্রথমার্ধের বাকি সময় আর বলার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনো দল। গোলরক্ষকদের দৃঢ়তা ও ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় গোলশূন্য সমতাতেই শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।
দ্বিতীয়ার্ধেও দাপট দেখায় বসুন্ধরা কিংস। ৪৯তম মিনিটে রহমতগঞ্জের রক্ষণে একটি ভুল বোঝাবুঝি ঘটে। এই সুযোগে বসুন্ধরা কিংসের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হুয়ান লেসকানোর জোড়ালো শট সাইড বারে লেগে প্রতিহত হয়, ফলে আরো একটি সুযোগ হাতছাড়া হয়। ৫২তম মিনিটে বসুন্ধরা কিংসের ইভান্স ইত্তির বাড়ানো ক্রস লেসকানোর কাছে পৌঁছানোর আগে গোলরক্ষক আহসান হাবিব বিপু দুর্দান্ত দক্ষতায় নিজের আয়ত্বে নেন।
৭৫তম মিনিটে আসে মাহেন্দ্রক্ষণ – বক্সের ভেতর বল পেয়ে নাবীব নেওয়াজ জীবনের কাটব্যাকের পর তপু বর্মন পায়ের নিচ থেকে বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন, এবং সেই সুযোগে সলোমন কিং গোল করে রহমতগঞ্জকে লিড এনে দেন। এরপর ৮২তম মিনিটে বসুন্ধরা কিংসের সাদ উদ্দিনের দুর্দান্ত ক্রসে রাকিব হোসেনের আলতো হেড জালের ঠিকানা খুঁজে নেয় – ফলে বসুন্ধরা কিংস সমতা ফেরাতে সক্ষম হয়। এরপর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে বেশ জমে উঠে ম্যাচ। দুইদলের খেলোয়াড়রা বেশ কয়েকবার নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়ান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েকটি হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। এছাড়া গ্যালারি থেকে সমর্থকদের আক্রমণের শিকার হন রহমতগঞ্জ গোলকিপার বিপু – যে কারণে বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে ম্যাচ। তবে ম্যাচের ১১২তম মিনিটে দৃশ্যপট পাল্টে দেন বদলি নামা ফরোয়ার্ড ইনসান হোসেন।
ডান প্রান্ত থেকে রাকিব হোসেনের ক্রসে দুর্দান্ত হেডে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন ইনসান হোসেন।গোল করেই বুনো উল্লাসে মেতে উঠেন এই তরুণ।ফরোয়ার্ড – উল্লাসে মেতে উঠে বসুন্ধরা কিংস। তবে ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরার দারুন এক সুযোগ হারায় রহমতগঞ্জ – কিরণের হেড দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন শ্রাবণ। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয় বসুন্ধরা কিংসকে পৌঁছে দেয় ফাইনালে। আগামী ২১ এপ্রিল ময়মনসিংহে এবারের ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ঢাকা আবাহনীর মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা কিংস।