দীর্ঘ ক্যারিয়ারের শেষে পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানালেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। বুধবার ব্রাদার্স ইউনিয়নের মাঠে লিগের প্রস্তুতি চলাকালে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তার অবসরের ঘোষণা দেন এই অভিজ্ঞ গোলরক্ষক।
“আপনাদের মাধ্যমেই আসলে ঘোষণা করতে চাই, আগামীকাল মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই অবসরের ঘোষণা দিচ্ছি। এটা আসলে সব ধরনের ফুটবল থেকেই অবসর নেওয়া। আমার আসলে পরিকল্পনাই ছিল, ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্লাব ফুটবল চালিয়ে যাব। আমার মনে হচ্ছে, ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার এখনই সঠিক সময়।”
মানিকগঞ্জ থেকে উঠে আসা রানার পেশাদার ফুটবলের শুরু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর হয়ে খেলার পর তিনি যোগ দেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। তবে এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবে তার পথচলা খুব বেশি রঙিন ছিল না; ২০১৬ সালে শেষ হয় সেই অধ্যায়।
জাতীয় দলে রানার অভিষেক হয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে, নেপালের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে। এরপর জাতীয় দলের হয়ে তিনি খেলেছেন ২৫টি ম্যাচ, যার শেষটি খেলেন ২০২১ সালে নেপালের বিপক্ষে। ২০২২ সালের নেপাল সফরের দলে থাকলেও এরপর কোচ হাভিয়ের কাবরেরার অধীনে স্কোয়াডে জায়গা হারান তিনি।
“জাতীয় দল থেকে ২০২৩ সালেই অবসর নিতে চেয়েছিলাম। হাভিয়ের কাবরেরা বিষয়টা জানত। তাকে বলেছিলাম, স্কোয়াডে থাকতেই আমি বিদায় নিব। ওই সময় জিকোরা ভালো করছিল, আমিও ভেবেছিলাম তরুণরা আসুক। আমি বিদায় নেই। কিন্তু তখন কাবরেরা আমার সাথে একমত হননি। এরপর যে কোনো কারণেই হোক জাতীয় দল থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেটা আমার জন্য দূর্ভাগ্যজনক। ওই সময় যদি মাঠ থেকে জাতীয় দলকে বিদায় জানাতে পারতাম, তাহলে আমার জন্য ভালো হতো।”
বিদায়ের মুহূর্তে স্মরণীয় ও হতাশাজনক অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেছেন রানা।
“ফুটবলে আমার সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত সল্ট লেকে ভারতের সাথে ড্র করা, আর সবচেয়ে হতাশার জায়গা ভুটানের বিপক্ষে হেরে ১৪ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে দূরে থাকা।”
ক্লাব ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন চট্টগ্রাম আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং, এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত শেখ রাসেলের হয়ে খেলার পর আবার চট্টগ্রাম আবাহনী হয়ে সর্বশেষ যোগ দেন ব্রাদার্স ইউনিয়নে। চলতি মৌসুমে ব্রাদার্সের হয়ে ১৬ ম্যাচের মধ্যে ৭টি খেলেছেন, তবে ক্লিন শিট রাখতে পেরেছেন মাত্র একটিতে।
ক্লাব বা জাতীয় দলের হয়ে কোনো শিরোপা না জিতলেও রানা তার ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট।
“আলহামদুল্লিল্লাহ, যা পেয়েছি তা নিয়ে সন্তুষ্ট। আমি অজপাড়া গাঁ থেকে উঠে এসেছি। প্রথাগত কোনো ট্রেনিং নিয়ে আমি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাইনি। আমরা যখন বেড়ে উঠেছি, তখন বাংলাদেশের ফুটবলের উন্মাদনা ছিল। গ্রামে গঞ্জে মাঠ ছিল, সবাই খেলত। সেখান থেকেই আমার উঠে আসা।”
“বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। সেনাবাহিনী থেকে বের হয়ে আসার কারণ জাতীয় দলে খেলা। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল জাতীয় দলে খেলার। ব্যক্তিগতভাবে সব মিলিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে খুশি আমি।”
অবসরের পর ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত থাকার ইচ্ছাও জানালেন রানা।
“যেহেতু আমি ফুটবল দিয়েই রানা, ফুটবল দিয়েই যেহেতু আমার সবকিছু, এটা শুধু আমার পেশা ছিল না, ভালোবাসার জায়গা ছিল। অবসরের পর ফুটবলের সাথেই থাকব। হয় গোলকিপার কোচ হিসেবে কাজ করব, কিংবা সংগঠক হিসেবে কাজ করব। সামনের জুলাইতে গোলকিপিং কোচ-সি কোর্স শেষ করব। পরের মৌসুমে হয়ত কোনো ক্লাবের গোলকিপিং কোচ হিসেবেও আসতে পারি। জাতীয় দলের গোলকিপার কোচ হওয়ার আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছা আছে। যদি সুযোগ হয়, যদি আমার মনে হয়, এই কাজের জন্য আমি যথেষ্ট যোগ্য, তাহলে অবশ্যই সুযোগ পেলে কাজ করব।”