বাংলাদেশ ফুটবলে এখন প্রবাসীদের দারুণ উত্থান। জামাল ভূঁইয়ার পথ ধরে এখন হামজা চৌধুরী, শমিত সোমদের মতো প্রবাসী ফুটবলাররা দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামছেন। আর তাতেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলাররা আগ্রহ দেখাচ্ছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করার প্রতি। এবার তাদের সেই আগ্রহকে বাস্তব রূপ দিতে বাফুফে আয়োজন করতে যাচ্ছে দেশের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রবাসী ফুটবলারের ট্রায়াল!

প্রথমবারের মতো ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে বসতে যাচ্ছে এক বিশাল ফুটবল উৎসব—যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিএফএফ নেক্সট গ্লোবাল স্টার’।আগামী ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন তিন দিনব্যাপী চলবে এই বিশেষ আয়োজন। তাতে অংশ নিতে ঢাকায় হাজির হচ্ছেন বিশ্বের ১৪টি দেশের ৫২ জন প্রবাসী ফুটবলার। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০ জন আসছেন যুক্তরাজ্য থেকে, আমেরিকা থেকে ১৪ জন, সুইডেনের ৫ জন, কানাডার ২ জন, আর বাকি দেশগুলোর মধ্যে ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, ওয়েলস, ইতালি, মালয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া—প্রতিটি দেশ থেকেই একজন করে ফুটবলার আসছেন।

এই তিন দিন সকাল ও বিকেলে দুই সেশনে ভাগ করে হবে ট্রায়াল। আর শেষ দিনে, ৩০ জুন, হবে ৯০ মিনিটের একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ—যেখানে এই প্রবাসীরা একে অপরের বিপক্ষে খেলবেন। বাফুফের টেকনিক্যাল কমিটির অধীনে ট্রায়াল পরিচালনা করবেন দেশের সেরা কোচরা। নেতৃত্বে থাকবেন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সাইফুল বারী টিটু। তার সঙ্গে থাকবেন সাইদ হাসান কানন, মারুফুল হক, জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু, গোলাম রব্বানী ছোটন, আলফাজ আহমেদ ও মাহবুব হোসেন রক্সি। এই পুরো প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন জাতীয় দলের স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা।

এখানে অংশ নিতে হলে খেলোয়াড়দের ২৭ জুনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বয়সসীমা ১৪ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে হলেও মূল নজর থাকবে অনূর্ধ্ব-১৭, ১৯ ও ২৩ বছর বয়সী ফুটবলারদের ওপর। তবে সবকিছুতেই খরচ বহন করতে হবে ফুটবলারদের নিজেদেরই। বাফুফে শুধু দেবে জার্সি, শর্টস আর মোজা। বুট, শিনগার্ডের মতো ব্যক্তিগত জিনিসপত্র আনতে হবে নিজেদেরকেই।

ঢাকার রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাফুফের সহ-সভাপতি ও ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, “আমরা ফুটবলকে নানাভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাই চেষ্টা করছি। এই উদ্দেশ্যে ফেডারেশন থেকে কিছু স্ট্যান্ডিং কমিটি করা হয়েছে। এর বাইরেও কয়েকটা বিশেষায়িত কমিটি করা হয়েছে কর্মসূচি এগিয়ে নিতে। সেই ধরনের একটা কর্মসূচি হচ্ছে বিএফএফ নেক্সট গ্লোবাল স্টার। বিদেশে থাকা যেসব বাংলাদেশি আমাদের দেশের লিগে বা টুর্নামেন্টে খেলতে চান তাদের আমরা উৎসাহিত করবো। তাদের সঙ্গে এতে একটা বন্ধন তৈরি হচ্ছে। সেটারই অংশ হিসেবে এই ক্যাম্পেইন। ভবিষ্যতে জাতীয় দলের জন্যও তাদের ডাকা হবে।”

 

তবে শুধু প্রবাসীদের জন্যই নয়, ঘরোয়া ফুটবলারদের দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে নাসের শাহরিয়ার জাহেদী আরো বলেন, “কথা উঠেছে এতে কি আমরা স্থানীয়দের কম নজর দিচ্ছি। কথা সেটা না। আপনারা জানেন বাংলাদেশের ফুটবলে জাগরণের চেষ্টা করছি আমরা। আমাদের মূল ফোকাস তৃণমূলের ফুটবলকে অ্যাকটিভেট করা। তাই স্থানীয়দেরও মূল্যায়ন করা হবে। আমরা চাই যারা বাইরে স্টার পর্যায়ে গেছেন, যেমন হামজা, জামাল ভূঁইয়া, ওদের মতো বাংলাদেশ থেকেও যেন এভাবে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মে আগামী কয়েক বছরে আমাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খেলোয়াড় দেখতে পারি। অর্থাৎ এটা শুধু দেশের বাইরে থেকে দেশে আনতে চাই, দেশের ছেলেদেরও সেভাবে দেখতে চাই।”

এই ট্রায়াল থেকে ভালো পারফরম্যান্স করা খেলোয়াড়দের বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের জন্য চিন্তা করছে বাফুফে। একইসঙ্গে শেষ দিনের উন্মুক্ত ট্রায়াল থেকে বিভিন্ন ক্লাবও তাদেরকে ঘরোয়া ফুটবলে খেলানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ করতে পারবে।

Previous articleএশিয়ান মিশনে আফিদারা, কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েই রওনা মিয়ানমারের পথে
Next articleইরানের গ্রুপে বাংলাদেশ, ফুটসাল এশিয়ান কাপে প্রথমবার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here