দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাস, দারুণ প্রতিরোধ আর ঋতুপর্ণা চাকমার জোড়া গোলে এশিয়ার পরাশক্তি মিয়ানমারকে হারিয়ে অভাবনীয় সাফল্যের পথে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই জয় শুধু বড় এক স্কোরলাইন নয়, বরং মেয়েদের ফুটবলে আরেকটি নতুন ইতিহাস রচনার বার্তা। গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষকে হারিয়ে এএফসি উইমেন’স এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে এখন পিটার বাটলারের দল।
মিয়ানমারের ইয়াংগুনের থুয়ান্না স্টেডিয়ামে বুধবার স্বাগতিকদের বাছাইয়ের ম্যাচে ২-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯তম মিনিটে দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর ৭২তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ঋতুপর্ণা। শেষ দিকে ব্যবধান কমান মিয়ানমারের উইন উইন।
বাহরাইনের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৭-০ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের টেবিলে শীর্ষে উঠল পিটার জেমস বাটলারের দল। তুর্কমেনিস্তানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে বাছাই শুরু করা মিয়ানমারের পয়েন্ট ৩।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আগামী শনিবার তুর্কমেনিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচে অনাকাঙ্খিত কিছু না ঘটলে আগামী বছর অস্ট্রেলিয়া হতে যাওয়া এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলা নিশ্চিত করবেন আফঈদা-স্বপ্নারা।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে মিয়ানমার। দুই দলের সবশেষ দেখায় ৫-০ গোলের বড় হারের অতীত সঙ্গী ছিল বাংলাদেশের। তাছাড়া খেলাও প্রতিপক্ষের মাঠে, দর্শকের সামনে। সবকিছুই ছিল মারিয়া-মনিকাদের প্রতিকূলে। তবে বাহরাইন ম্যাচ জিতে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিল মেয়েরা।
মূল পর্বের এক টিকেটের দাবিদার দুই দলের লড়াইয়ে শুরু থেকেই ছিল দারুণ উত্তাপ। দ্বিতীয় মিনিটে বাইলাইনের একটু ওপর থেকে মনিকা চাকমার ক্রস গ্লাভসে নেন মিয়ানমার গোলকিপার। পরের মিনিটেই প্রতিপক্ষের আক্রমণ ব্লক করেন শামসুন্নাহার সিনিয়র।
দ্বাদশ মিনিটে বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে ওঠেন রুপনা চাকমা। মাঝমাঠ থেকে আসা থ্রু পাসের আগেই ছুটে এসে পোস্ট ছেড়ে বল ক্লিয়ার করেন এই গোলকিপার।
অষ্টাদশ মিনিটে ড্রিবলিংয়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের ওপর ফাউলের শিকার হন শামসুন্নাহার জুনিয়র। ঋতুপর্ণার ফ্রি কিক রক্ষণ দেয়ালে লেগে ফিরে আসলে, সেই বলেই নিচু শটে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে পাঠান তিনিই। এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশের ডাগআউট।
২৪তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েও মিস করে বাংলাদেশ। ঋতুপর্ণার ক্রসে ছোট বক্সের ভেতরে শামসুন্নাহার জুনিয়রের ট্যাপ পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
৩১তম মিনিটে মিয়ানমারের একটি দূরপাল্লার ফ্রি কিক সহজেই ফিরিয়ে দেন রুপনা। ছয় মিনিট পর আবার বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। রুপনার ভুল ক্লিয়ারেন্সে বল চলে যায় খিন মো মো তুনের কাছে। তবে তার শট বাইরে দিয়ে যায়।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মিয়ানমারের শট লাগে ক্রসবারে। শান থ থ সুযোগ পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন। এরপর মাথায় ব্যথা পেয়ে মাঠেই পড়ে যান শামসুন্নাহার জুনিয়র। চিকিৎসার পর উঠে দাঁড়ান তিনি। এর মধ্যেই বিরতির বাঁশি।
বিরতির পর সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে মিয়ানমার। একের পর এক আক্রমণ রচনা করে তারা। তবে শামসুন্নাহার সিনিয়র, আফঈদা খন্দকারদের দৃঢ়তায় প্রতিটি আক্রমণ প্রতিহত হয়।
৭২তম মিনিটে ফের জ্বলে ওঠেন ঋতুপর্ণা। প্রতিপক্ষ বক্সের বাইরে থেকে বাম পায়ের চমৎকার শটে বল জালে জড়ান তিনি। হাওয়ায় ভেসে বল চলে যায় মিয়ানমার গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে।
৭৭তম মিনিটে দুর্দান্ত সেভ করেন রুপনা চাকমা। মাইয়াত এহিনের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন তিনি।
৮৮তম মিনিটে আনমার্কড উইন উইনের গোলে ব্যবধান কমায় মিয়ানমার। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান ধরে রেখে ম্যাচ শেষ করে বাংলাদেশ।
শেষ বাঁশি বাজার পর উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা দল। এই জয় শুধুই একটি ম্যাচ জয় নয়—এটি এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে পৌঁছে দিতে পারে তার প্রথম এশিয়ান কাপ মূল পর্বে।