বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্বে থাকলেও দেশের মাটিতে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার উপস্থিতি যেন ক্ষণিকের অতিথির মতো। চলতি বছরের ছয় মাসেরও বেশি সময় পার হলেও তার অর্ধেক কাটছে দেশের বাইরে। এমন ঘনঘন ছুটি ও উপস্থিতির অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অভ্যন্তরেও।
গতকাল (শনিবার) সকালে আবারও স্পেনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। এর আগের দিন তিনি বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন। জুনের মাঝামাঝি সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হারের পরও পরদিনই ইউরোপে ফিরে গিয়েছিলেন ক্যাবরেরা। ২৭ জুন ঢাকায় ফিরলেও মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় ফের ছুটিতে গেলেন তিনি। জুলাই মাসটা ইউরোপেই কাটাবেন বলে জানা গেছে, দেশে ফিরবেন আগস্টের মাঝামাঝি।
এছাড়াও, ঢাকায় ফেরার পর ২৮-৩০ জুন তিনি প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়াল পর্যবেক্ষণ করেন এবং ২ জুলাই বাফুফের ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভায় অংশ নেন। ৩ জুলাই আবারও বাফুফে সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। এরপর ৬ জুলাই ভোরে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।
ক্যাবরেরার এভাবে ঘন ঘন ছুটি নেওয়া ও দেশের বাইরে থাকার বিষয়টি নিয়ে ফেডারেশনের ভেতরে অসন্তোষ বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্বাহী সদস্য ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, “মাসে হাজার হাজার ডলার বেতন দেওয়া হচ্ছে, এরপরও সে বিদেশ থাকবে এবং বছরে কয়দিন ছুটি সেটা আমরা অনেকেই জানি না।”
বাংলাদেশের সাবেক কোচ জেমি ডে’র অতিরিক্ত ছুটি নেওয়া নিয়েও একসময় আলোচনা হয়েছিল। এবার সেই বিতর্কের কেন্দ্রে ক্যাবরেরা। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হারের প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও জাতীয় দল কমিটির কোনও আনুষ্ঠানিক সভা হয়নি। বরং ১১ জুলাই কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠেয় সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ উপলক্ষ্যে বাফুফে সভাপতি দেশে ফিরে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠকে বসেন বসুন্ধরা গ্রুপে সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসানের অফিসে।
সেই বৈঠকে কোচ ক্যাবরেরা, বাফুফের এক সহ-সভাপতি ও তিনজন নির্বাহী সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে সেখানে কোনো জবাবদিহির পরিবেশ না থাকলেও সামনে থাকা অনূর্ধ্ব-২৩ টুর্নামেন্ট ও সেপ্টেম্বর ফিফা উইন্ডো নিয়ে আলোচনা হয়। অনেকে ধারণা করছেন, সভাপতির সঙ্গে একান্ত আলোচনাতেই ক্যাবরেরাকে কিছু বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে।
ওই বৈঠকে নারী দলের এশিয়া কাপ নিশ্চিত করায় সংবর্ধনার পরিকল্পনা, অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট শুরু, স্টেডিয়াম সংস্কার, জেলা লিগ চালু, সাফ অনূর্ধ্ব-২০ সফলভাবে আয়োজনের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে জাতীয় দলের মূল কোচের এভাবে দায়িত্বের বাইরে থাকা ও জবাবদিহি এড়িয়ে যাওয়া অনেকের কাছেই ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করছে।