দক্ষিণ এশিয়ার ‘বিশ্বকাপ’ হিসেবে পরিচিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এ বছর স্থগিত হওয়ার পর আগামী বছরের আয়োজনও জটিলতায় আটকে গেছে। ফিফা উইন্ডো, এশিয়ান গেমস, স্পন্সর সংকট—সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে সাফ অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়েই দেখা দিয়েছে বড় শঙ্কা।
দক্ষিণ এশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ ফুটবল আসর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ সালে আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে নানা কারণে। মূল সমস্যা সময়সূচিতে। জুন–জুলাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের কারণে এর আগে সাফ আয়োজন সম্ভব নয়। অন্যদিকে বিশ্বকাপের পর প্রথম বড় ফিফা উইন্ডো সেপ্টেম্বর–অক্টোবর হলেও সে সময় রয়েছে এশিয়ান গেমস—যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই ফুটবলে অংশ নেয়।
সাফের সাধারণ সম্পাদক পুরুষোত্তম ক্যাটেল জানিয়েছেন, নির্বাহী সভায় আগামী বছরের বিভিন্ন সম্ভাব্য সূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে সাফ আয়োজনের পরিকল্পনা থাকলেও কেন্দ্রীয় ভেন্যুতে টুর্নামেন্ট করার কথাও ভাবা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ভেন্যু হলে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরের ১৬ দিনের বড় উইন্ডো ব্যবহার করা সম্ভব। আর হোম-অ্যান্ড-অ্যাওয়ে হলে আগস্টে গ্রুপ পর্ব এবং সেপ্টেম্বর উইন্ডোতে নকআউট পর্ব আয়োজন করতে হবে।
তবে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না হলেও হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ফরম্যাট থেকে সাফ সরে আসার সম্ভাবনাই বেশি। বড় কারণ—মার্কেটিং পার্টনার স্পোর্টস ফাইভ পৃষ্ঠপোষকতায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বাজার পরিস্থিতির অবনতিকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখনো চুক্তি নবায়ন হয়নি। ফলে সাফ একক স্পন্সর নিয়ে একটি দেশে টুর্নামেন্ট আয়োজনের দিকেই ঝুঁকছে।
এর পাশাপাশি এশিয়ান গেমসের সময়সূচিও বড় সমস্যার জায়গা। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে গেমস। এই সময়ে অনেক জাতীয় দল ফুটবলারই খেলবেন অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে। নিয়ম অনুযায়ী তিনজন সিনিয়র খেলোয়াড়ও নেয়া যাবে। ফলে একই সময়ে সাফ আয়োজন প্রায় অসম্ভব।
সাবেক বাফুফে সভাপতি এবং সাফ প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিন অবশ্য সাফ আয়োজন করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘এই বছর হয়নি, আগামী বছর করতেই হবে। বিশ্বকাপের আগে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিশ্বকাপের পর সুবিধাজনক সময়টাই খুঁজতে হবে। স্পন্সরের চেয়ে সময় ঠিক করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’
২০২৬ সাল নিয়ে ভাবলেও সেখানে জটিলতা কম নয়। সেই বছরের নভেম্বরের ফিফা উইন্ডো মাত্র ৯ দিনের। অতিরিক্ত ২–৩ দিন যোগ করে টুর্নামেন্ট শেষ করার চেষ্টা করা হতে পারে, তবে সেটিও নিশ্চয়তা নয়।
অন্যদিকে সাফ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়েও আশাবাদ কম। কাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভুটান ছাড়া অন্য দেশে নিয়মিত ক্লাব লিগ না থাকায় ক্লাব টুর্নামেন্ট আয়োজন কঠিন। স্পোর্টস ফাইভের সঙ্গে থাকা পৃষ্ঠপোষকতা চুক্তি না থাকলে নারী–পুরুষ সাফ, অনূর্ধ্ব–২৩, ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ—সব আসরই ঝুঁকিতে পড়বে।
বাংলাদেশের জাতীয় দল নিয়েও রয়েছে আলাদা চাপ। ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচের পর ১–৯ জুন একটি উইন্ডো রয়েছে। তবে বিশ্বকাপের আগে অনেক দলই প্রস্তুতি ম্যাচে আগ্রহী নাও হতে পারে। সেপ্টেম্বর উইন্ডো যদি গেমসের জন্য ব্যয় হয়, জাতীয় দলের ম্যাচ না হলে র্যাংকিংয়েও পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। ফলে নভেম্বর উইন্ডোটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
তবে প্রতিযোগিতা পুরোপুরি থেমে থাকছে না। আগামী জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডে পুরুষ-নারী ফুটসাল দিয়ে সাফের বছরের সূচনা হবে। এরপর ফেব্রুয়ারিতে নারী অনূর্ধ্ব–১৯, মার্চে অনূর্ধ্ব–২০, এপ্রিলে নারী অনূর্ধ্ব–১৭, মে’তে নারী সাফ এবং আগস্টে অনূর্ধ্ব–১৭ সাফ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। দুই–তিন দিনের মধ্যেই বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত সূচি প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নারী সাফে বাংলাদেশ টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন। এবার হ্যাটট্রিকের সুযোগ থাকলেও টুর্নামেন্টের ভেন্যু এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ আয়োজন নিয়ে সংকট থাকলেও সম্ভাবনা পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে সময়, পৃষ্ঠপোষকতা, আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা—সব মিলিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনের পথ সহজ নয় বলেই মনে হচ্ছে।




