দেখতে দেখতে শেষ ম্যাচে এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশের ফুটবল ক্যালেন্ডারের অন্যতম শীর্ষ টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপ। মৌসুমের দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট হিসেবে অনুষ্ঠিত হওয়া ফেডারেশন কাপের ৩৩তম আসরের শুরু থেকেই ছিল নাটকীয়তা। কমলাপুরের টার্ফ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও উত্তর বারিধারা ক্লাব। টার্ফ নিয়ে অসন্তোষ ছাড়াও বসুন্ধরা কিংসের অভিযোগের তালিকায় ছিলো ‘কোনো নির্দিষ্ট ক্লাবকে সুবিধা দিতে টুর্নামেন্টের ফরম্যাট পরিবর্তন’। এসব কারণেই ফেডারেশন কাপে অংশ নেয়নি তিন ক্লাব। ফলে টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ানোর আগেই তিন গ্রুপ থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় ছয় ক্লাবের।

সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মাঠে ছিল ফেডারেশন কাপ। ২৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া মৌসুমের দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপে সবাইকে ছিটকে দিয়ে শিরোপা লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী দুই ক্লাব, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড ও রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। আগামী রোববার বিকাল ৫ঃ৩০ মিনিটে ফেডারেশন কাপের ৩৩তম শিরোপা দখলের লড়াইয়ে নামবে দুদল।

নতুন মৌসুমে দলবদলের সময়ই বাকি দলগুলোকে একপ্রকার হুংকার দিয়ে রেখেছিল আকাশী-নীলরা। স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে মাঠের খেলায়ও নিজেদের সামর্থের প্রমাণ দিয়েছে মারিও লেমোস শিষ্যরা। ফেডারেশন কাপের গ্রুপ পর্বে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে নাটকীয় টাইব্রেকারে হেরে গ্রুপ রানার্স আপ হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে গেলেও শেষ আটে শেখ জামালের জালে ‘আধ ডজন’ গোল দিয়ে সেমিতে পৌঁছে আবাহনী। সেমি ফাইনালে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয় তুলে ফাইনালে পৌঁছেছে ধানমন্ডির জায়ান্টরা।

অপরদিকে পুরান ঢাকার ‘জায়ান্ট কিলার’ রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি গ্রুপ পর্বে শেখ জামালের কাছে টাইব্রেকারে হেরে গ্রুপ রানার্স আপ হয়ে পৌঁছায় কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ আটে ২০১২-১৩ মৌসুমের ট্রেবল জেতা শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ৪-৩ গোলের দুর্দান্ত জয়ে সেমিতে পৌঁছে সৈয়দ গোলাম জিলানী শিষ্যরা। শেষ চারে ১০ বারের ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে রহমতগঞ্জ। কাগজে কলমে ততোটা শক্তিশালী না হয়েও দলগত খেলায় নিজেদের দিনে যেকোনো দলকে ভরকে দিতে পারে রহমতগঞ্জ, চলতি ফেডারেশন কাপে সেটাই প্রমাণ দিয়েছে তারা।

ফেডারেশন কাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৮ বার ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলেছে আকাশী নীল জার্সিধারিরা। পাশাপাশি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ১১ শিরোপার মালিকও আবাহনী। আর নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে মাত্র একবারই ফেডারেশন কাপের ফাইনালে খেলার সুখস্মৃতি রয়েছে রহমতগঞ্জের। ২০১৯-২০ মৌসুমের ফেডারেশন কাপের ফাইনালে গিয়েও বসুন্ধরা কিংসের কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে রহমতগঞ্জ। ফাইনালে আবাহনীর জন্য বিপদের কারণ হতে পারেন তাদের ‘ঘরের ছেলে’ বনে যাওয়া সানডে চিজোবা। এই মৌসুমেই আবাহনী ছেড়ে রহমতগঞ্জে যোগ দেওয়া এই নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ফেডারেশন কাপে করেছেন ৩ গোল। সানডের পাশাপাশি রহমতগঞ্জের ঘানাইয়ান ফরোয়ার্ড ফিলিপ আদযাহও করেছেন সমান ৩ গোল। এই দুই ফরোয়ার্ড রহমতগঞ্জের বড় আস্থার নাম। এর পাশাপাশি আসরোড়ভ, কিরণ, লেন্সিং তোরে, তুষারদের পারফরমেন্সের দিকে তাকিয়ে থাকবে পুরান ঢাকার ক্লাবটি। অপরদিকে আবাহনীর স্কোয়াডে রয়েছে কোস্টারিকান বিশ্বকাপার দানিয়েল কলিনড্রেস। যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের চিত্রনাট্য পরিবর্তন করে দিতেন পারেন এই ফরোয়ার্ড।

এছাড়াও আবাহনীর নতুন ‘নাম্বার নাইন’ ব্রাজিলিয়ান ডরিয়েলটন ফেডারেশন কাপে এখন পর্যন্ত ২ ম্যাচেই করেছেন ৪ গোল। ইনজুরির কারণে সেমি ফাইনালে না খেললেও ফাইনাল ম্যাচের একাদশে ফেরার জোর সম্ভাবনা রয়েছে এই ফরোয়ার্ডের। এছাড়াও ইনজুরি আক্রান্ত রাফায়েল অগোস্তো, সুশান্ত ত্রিপুরারও ফাইনালে আবাহনীর একাদশে থাকার বড় সম্ভাবনা রয়েছে। এদের পাশপাশি রাকিব, বাদশা, ইমন বাবুরাও রহমতগঞ্জকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত।

সবমিলিয়ে দুর্দান্ত একটা ফাইনালই অপেক্ষা করছে ফুটবপ্রেমীদের জন্য। ‘জায়ান্ট‘ আবাহনীর ১২তম ফেডারেশন কাপ জয় নাকি ‘জায়ান্ট কিলার’ রহমতগঞ্জের ১ম ফেডারেশন কাপের শিরোপা জয়? কি ঘটতে যাচ্ছে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে? কার ঘরে যাচ্ছে মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপা? কে ই বা হচ্ছে টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার? সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে আর মাত্র কয়েক মুহূর্তের অপেক্ষা!

Previous articleসাইফের ‘জোড়া’ পেনাল্টি বাতিল কতোটা যৌক্তিক?
Next articleবালিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here