গেল কয়েক মৌসুমে দেশের ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে সফল দল বসুন্ধরা কিংস। বিগত পাঁচ মৌসুমে যিনি এই দাপটের নেতৃত্বে ছিলেন, সেই স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজনকে সরিয়ে এবার তারা ভরসা রেখেছিল রোমানিয়ান কোচ ভ্যালেরিউ তিতার ওপর। তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্লাবের প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি তিনি।
তিতার অধীনে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের তিন ম্যাচেই হেরে গ্রুপের তলানিতে থেকে বিদায় নেয় কিংস। এরপর এবারের প্রিমিয়ার লিগেও শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে তাদের। অবশ্য ঘরোয়া মৌসুমের প্রথম ট্রফি হিসেবে চ্যালেঞ্জ কাপ জিতে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিল দলটি। কিন্তু সবচেয়ে বড় চাপ তৈরি হয় ফেডারেশন কাপে।
প্রথম কোয়ালিফায়ারে দশজনের আবাহনীর কাছে হার, ফাইনালে যাওয়াই পড়ে যায় অনিশ্চয়তার মুখে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো। রহমতগঞ্জকে হারিয়ে ফাইনালে যাওয়া। আবার সেই ফাইনালের নাটকীয়তা—আলোকস্বল্পতায় স্থগিত হওয়া ম্যাচ, বাকি ছিল অতিরিক্ত সময়ের ১৫ মিনিট। একজন খেলোয়াড় কম নিয়ে মাঠে নামতে হয় কিংসকে।
শেষ ১৫ মিনিটের সেই ফাইনালেই বদলে যায় দৃশ্যপট। সমতায় থাকা ম্যাচ শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে গড়ায়, স্নায়ুর লড়াইয়ে আবাহনীকে ৫-৩ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে বসুন্ধরা কিংস। আর মাঠে আনন্দে ভেসে যান ভ্যালেরিউ তিতা। একপর্যায়ে খেলোয়াড়দের উল্লাসে তিনি হয়ে ওঠেন কেন্দ্রবিন্দু—তাকে ঘিরে গোল হয়ে উদযাপন, শূন্যে ভাসিয়ে তোলা। চাপ, সমালোচনা আর প্রশ্নবাণের মধ্যেও ঠিকই নিজের উত্তরটা দিয়ে দেন এই রোমানিয়ান কোচ।
ম্যাচ শেষে আবেগ ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে। শেষ সাতদিন ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন,
‘এই জয়ে আমি ভীষণ খুশি। গত সাত দিন আমি ঠিকমতো ঘুমাইনি। এই ম্যাচের আগে আমি মাত্র এক ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। এটা ফাইনাল, আমি কোচ, আমার জন্য এটা সহজ নয়। সবাই শুধু বসুন্ধরা কিংস নিয়ে কথা বলে, কিন্তু তাদের বুঝতে হবে এই বসুন্ধরা কিংস আগের বসুন্ধরা কিংস নয়, অন্য একটা বসুন্ধরা কিংস। আমরা অনেক বাঁকবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।’
এখানেই থেমে থাকেননি তিতা, সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে তিনি বলেন,
‘এর আগে আমরা বাংলাদেশ ২.০ চ্যালেঞ্জ কাপ জিতেছি, এবার ফেডারেশন কাপ জিতলাম। এখন আমাদের লক্ষ্য দ্বিতীয় স্থানে থেকে লিগ শেষ করার। আমি মিগেলকে পাইনি একমাস, তারিককে পাইনি, সে দারুণ খেলোয়াড়। এটা সহজ ছিল না।’
ফাইনালের বিতর্ক নিয়েও স্পষ্ট বক্তব্য তার,
‘সেদিন (গত মঙ্গলবার) যখন ফাহিমকে লাল কার্ড দেওয়া হলো, তার আগে ফাউল করেছিল ইনসান। আমি হলুদ বা লাল কার্ড নিয়ে কথা বলতে চাই না। কিন্তু কার্ড তো ফাহিমের পাওয়ার কথা ছিল না। তবে ফুটবলে এগুলো হয়ই। এখন এই শিরোপার কারণে আমরা এএফসি কাপে খেলার সুযোগ পেতে পারি।’
মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ হয়তো হাতছাড়া হচ্ছে, কিন্তু তিতার হাত ধরেই বসুন্ধরা কিংস জিতেছে দুই ট্রফি। তবে টানা পাঁচবারের লিগ চ্যাম্পিয়নরা এবার শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে গেছে। তাই আগামী মৌসুমের জন্য দল নিয়ে নতুন পরিকল্পনায় এগোতে হবে তিতাকে।