বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে সফলতম ক্লাব ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। তবে গেলো কয়েক মৌসুম বসুন্ধরা কিংসের রাজত্বে নিজেদের হারিয়ে খোঁজা আকাশী নীল জার্সিধারিরা এবারের মৌসুমে গেলো কয়েক বছরের ব্যার্থতা ঘুচাতে বদ্ধ পরিকর। স্বাধীনতা কাপে বাকি দলগুলোকে একপ্রকার উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জেতা আবাহনী এবার পৌঁছে গেলো মৌসুমের দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপের ফাইনালে। বিগ বাজেটের সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছে মারিও লেমোসের দল। এর আগে নির্ধারিত সময়ের খেলা ছিলো ২-২ গোলে ড্র। অতিরিক্ত সময়ে সে ব্যাবধান গিয়ে ঠেকেছিল ৩-৩ এ। সব মিলিয়ে আক্রমন পাল্টা আক্রমনের দুর্দান্ত এক ম্যাচই উপভোগ করেছেন ফুটবল প্রেমীরা। টুর্নামেন্টে চার গোল করা ব্রাজিলিয়ান ডরিয়েল্টন গোমেজ ইনজুরির কারনে এ ম্যাচে না থাকায় আক্রমণ ভাগে বেশ ভুগেছে মারিও লেমোসের দল। নাবীব নেওয়াজ জীবন, রাকিব হোসেনরা একের পর এক গোল মিসের কারণে খেলা গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে। এদিকে গত আসরের রানার্সাপরা পূর্ণ-শক্তির দল নিয়েও টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলার সুযোগ হারাল। ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিং ব্যর্থতার পাশাপাশি ক্রস বারও এদিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সাইফের সামনে।

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে চতুর্থ মিনিটেই দুর্ভাগ্য পথ আগলে দাঁড়ায় সাইফ স্পোর্টিংয়ের। মাঝমাঠে থেকে সাদ্দাম হোসেনের লং পাস ধরে বাঁ দিক দিয়ে কিছুটা এগিয়ে বক্সে ঢুকে এমফন সানডের কোনাকুনি শট ক্রসবার কাঁপিয়ে ফিরে আসে। তবে ম্যাচের অষ্টম মিনিটে রাকিব হোসেনকে বক্সে মঞ্জুরুর রহমান মানিক ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সফল স্পট কিকে আবাহনীকে এগিয়ে নেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল অগোস্তো। এরপর ১১তম মিনিটে ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেসের আড়াআড়ি ক্রসে রাকিবের ভলি গোললাইন থেকে ফিরিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ হতে দেননি এমেরি বাইসেঙ্গে। এরপর ১৭তম মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ নষ্ট হয় আবাহনীর। অগোস্তোর নিখুঁত থ্রু পাস অফ-সাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন রাকিব। কিন্তু গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে লক্ষ্যভেদের চেষ্টা সফল হয়নি। ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকান পাপ্পু হোসেন। তিন মিনিট পর সমতায় ফিরে গত আসরের রানার্সআপ সাইফ স্পোর্টিং। ডান দিকের বাইলাইনের একটু উপর থেকে এমেকা উগবুগের কাট ব্যাকে আসরোরভ গফুরভের শট শহীদুল ইসলাম সোহেল ফিস্ট করে ফেরানোর পর এমফন সানডের ফিরতি শট জাল খুঁজে নেয়। ২৭তম মিনিটে ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেসের পাস থেকে সাইফ গোলরক্ষক পাপ্পুকে একা পেয়েও জালে জড়াতে ব্যার্থ হন জীবন।একটু পর বক্সের ডান দিকে বল পেয়ে দুর্বল শটে গোলরক্ষক হাতে বল তুলে দেন আবাহনীর রাকিব। এরপর বিরতির আগ মুহূর্তে আবাহনী গোলরক্ষক সোহেল ও ডিফেন্ডার বাদশার ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নিতে পারেননি নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমফন সানডে। ফলে ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।

বিরতিতে থেকে ফিরে কিছুটা ঢিলেঢালা ফুটবল খেলে দুদল। তবে ৭১তম মিনিটে বক্সের ভেতর সাইফ মিডফিল্ডার সাদ্দাম হোসেনকে ফেলে দেন আবাহনীর ডিফেন্ডার মনির হোসেন। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাশি বাজান রেফারি সাইমন হাসান। সফল স্পট কিকে সাইফ স্পোর্টিংকে এগিয়ে নেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড এমেকা ওগবুগ। ৮০ মিনিটে বক্সের ভেতর এমফন সানডেকে পিছন থেকে ফেলে দেন বদলি নামা জুয়েল রানা, সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে কার্পণ্য করেননি রেফারি। কিন্তু পেনাল্টি নিতে গিয়েছিলেন এমেরি বাইসেঙ্গে, তখনি ঘটে নাটকীয়তা। পরপর দুবার পেনাল্টি নিতে গিয়ে নিয়ম ভঙ্গ করায় আবাহনীর পক্ষে ফ্রি কিক দেন রেফারি। ফলে ম্যাচে আরো এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ন সুযোগ হারায় সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। ৮৬ মিনিটে ম্যাচে সমতায় ফেরা দারুণ সুযোগ পেয়েছিল আবাহনী কিন্তু নুরুল নাইম ফয়সালের প্রচেষ্টা আটকে যায় সাইফের গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেনের দুর্দান্ত সেইভে। নির্ধারিত নব্বই মিনিট শেষে যোগ করা তিন মিনিটের মাথায় ম্যাচে সমতা টেনে রোমাঞ্চের জন্ম দেয় ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেস। বক্সের ভেতর জুয়েল রানার পাস থেকে ফাকায় থাকা কলিন্ড্রেসের টোকা গোললাইন থেকে এমেরি বাইসেঙ্গের ফিরিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন। আর এতেই সমতায় ফেরার আনন্দে ভাসে আবাহনী সমর্থকরা। আর ২-২ গোলের সমতার ফলে নির্ধারিত সময় শেষে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই লিড নেয় আবাহনী। ৯৪তম মিনিটে রাকিব হোসেনের গোলে এগিয়ে যায় ধানমন্ডির জায়ান্টরা। ডান দিকের টাচ লাইন থেকে জুয়েল রানার বাড়ানো বল মেহেদি হাসান রয়েল নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারলে বল চলে যায় অরক্ষিত থাকা রাকিব হোসেনের কাছে, সেখান থেকে সহজেই বল জালে জড়িয়ে উল্লাসে মাতে আবাহনী। এরপর ১০৫তম মিনিটে সাইফকে সমতায় ফিরতে দেননি আবাহনী গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। বক্সের ভেতরে এমেকা ওগবুগের জোরাল শট লাফিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন সোহেল। ১২০ মিনিট শেষে যোগ করা এক মিনিটের মাথায় আবাহনীকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। বক্সের বাইরে থেকে কাউসার আলি রাব্বির দূর পাল্লার শট বা দিকে ঝাপিয়ে ঠেকিয়ে দেন। তবে পরের মিনিটে সাইফকে আর আটকাতে পারেনি আবাহনী। এমফম সানডের ক্রস থেকে প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করে রোমাঞ্চের জন্ম দেন বদলি নামা সাজ্জাদ হোসেন। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারে এমফন সানডে ও জামাল ভুঁইয়ার শট ঠেকিয়ে ম্যাচের নায়ক বনে যান আবাহনীর গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। আবাহনীর হয়ে টাইব্রেকারে গোল করেছেন মিলাদ শেখ, রেজাউল করিম, মেহেদি হাসান রয়েল ও নুরুল নাঈম ফয়সাল। সাইফের হয়ে টাইব্রেকারে গোল করেন এমেরি বাইসেঙ্গে, সাজ্জাদ হোসেন এবং ফয়সাল আহমেদ ফাহিম।

নাটকীয় এই জয়ে স্বাধীনতা কাপের পর ফেডারেশন কাপেরও ফাইনালে পৌঁছে গেলো ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। আর গত ফেডারেশন কাপে রানার্স আপ হওয়া সাইফের দৌড় থামলো সেমি ফাইনালেই। এর আগে প্রথম সেমিফাইনালে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পা দেয় রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস এন্ড সোসাইটি। আগামী ৯ ডিসেম্বর ফেডারেশন কাপের ফাইনালে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস এন্ড সোসাইটির বিপক্ষে শিরোপা জয়ের মিশনে নামবে মারিও লেমোস শিষ্যরা।

Previous articleমোহামেডানের দুঃখ রহমতগঞ্জ!
Next articleবাংলাদেশের দায়িত্বে স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের ক্যাবরেরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here