আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এশিয়ান ক্লাব ফুটবলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসর ‘এএফসি কাপ’। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে সবমিলিয়ে ৩৬ টি দল। এদের মধ্যে বাংলাদেশের ক্লাব বসুন্ধরা কিংস।
২২-২৩ ফুটবল মৌসুমে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল লীগ বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয় বসুন্ধরা কিংস। বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ফলে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগের বাছাইপর্বে খেলা সুযোগ পেয়েছিলো কিংস। কিন্তু সেখানে শারজাহ এফসির কাছে পরাজিত হলে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে অংশ নেওয়ার টিকেট পায় বসুন্ধরা।
এএফসি কাপের এই মৌসুমে বসুন্ধরা কিংস পড়েছে গ্রুপ ‘ডি’-তে। গ্রুপ ‘ডি’-এর বাকি সদস্যরা হলো ওড়িশা এফসি, মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং মাজিয়া স্পোর্টস। আগামীকাল ১৯ শে সেপ্টেম্বর মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টসের বিপক্ষে ম্যাচের মধ্যদিয়ে টুর্ণামেন্টের সূচনা করবে বসুন্ধরা কিংস। টুর্ণামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক দল প্রতিপক্ষের সাথে হোম এবং এওয়ে দুইটি করে ম্যাচ খেলতে পারবে। সেই হিসেব মতে মাজিয়ার বিপক্ষে কিংসের ম্যাচটি হতে যাচ্ছে এওয়ে ম্যাচ। গতকাল সেই উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে মালদ্বীপ পৌঁছেছিলো কিংস।
ম্যাচের আগে মাজিয়া বিপক্ষে সামর্থ্য বিচারে এগিয়ে আছে বসুন্ধরা কিংস। এএফসি কাপে মাজিয়ার বিপক্ষে এর আগে দুইবার মুখোমুখি হয়েছিলো অস্কারের শিষ্যরা। তারা দুইবারই মাজিয়াকে হারিয়েছে। পুরোনো স্মৃতি মনে রেখে এবারেও হারাতে বদ্ধপরিকর।
মাজিয়ার বিপক্ষে কিংসের আক্রমণভাগকে নেতৃত্ব ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন রবিনহো, ডরিয়েল্টন গোমেজ এবং রাকিব হোসেন। ঘরোয়া মৌসুমের প্রায় সব ম্যাচেই দুই ব্রাজিলিয়ান ডুয়োর সাথে দলের আক্রমণ ভাগ সামলেছে রাকিব। ফলাফলও এসেছে খুব ভালো। কিংসের এই এটাকিং ত্রায়ো গত মৌসুমের বিপিএলে প্রতিপক্ষের জালে সর্বমোট ৩৪ বার বল পাঠিয়েছিলো। তাই তারা মাজিয়ার রক্ষণকেও ভালো পরীক্ষার মধ্যে ফেলতে পারে বলে হলফ করেই বলা যায়।
আক্রমণের পর রক্ষণকে ঠিকভাবে সামলানোও একটি ম্যাচের জয়-পরাজয়ের নির্ধারণী প্রতীক। সেক্ষেত্রে কিংসের রক্ষণের ভরসা পাত্র হিসেবে থাকবেন বিশ্বনাথ ঘোষ, তারিক কাজী এবং উজবেক ডিফেন্ডার ববুরবেগ। এসিএলে শারজাহ এফসির বিপক্ষে ববুরবেগ নিজের জাত চিনিয়েছেন। সেদিন কিংস দুই গোল হজম করলেও শারজাহ এফসির বেশ কয়েকটা আক্রমণ আটকে দিয়ে দলকে ঘোর বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে বিশ্বনাথ সদ্য শেষ হওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেশের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েছে এবং তারিক কাজীও তার সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে বহু আগেই। তাদের সাথে গোলবারের অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করবে বাংলার বাজপাখি আনিসুর রহমান জিকো।
আক্রমণভাগ এবং রক্ষণভাগের মধ্যে যে রেখা সেতুবন্ধন তৈরি করে সেটি হলো মিডফিল্ড। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগেল ডামাসেনার প্রস্থানের ফলে কিংসের মিডফিল্ড সামনালোর গুরুদায়িত্ব এসে পড়বে উজবেক মিডফিল্ডার আশুরোর গাফুরোভ এবং শেখ মুরসালিনের উপর।ববুরবেগের মতো আশুরোর গাফুরোভ এসিএলে সুন্দর খেলা উপহার দিয়েছিলো ভক্তদের। দলের ডিফেন্স থার্ড সামলে এটাক বিল্ডয়াপ করে এটাকিং থার্ড বল সামলাই দেওয়ার ভূমিকাটাও সুন্দর করে সামলান গাফুরোভ। গাফুরোভ মতো ডিফেন্স থার্ডে পদচারণা না থাকলেও আক্রমণভাগকে সাপোর্ট দেওয়ার কাজটা নির্ভুলভাবে সামলাতে পারেন শেখ মুরসালিন, পাশাপাশি গোল করা কিংবা গোল করানোতে জুড়ি মেলা ভার রয়েছে বাংলাদেশী এই তরুণ ফুটবলারের।
মাজিয়ার বিপক্ষে বসুন্ধরা কিংসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচে জয় খেলোয়াড়দের মনোবল অনেক বাড়িয়ে দেয় যা পরবর্তী ম্যাচগুলোতে কাজে লাগে। তাই কোচ অস্কার ব্রুজনও মাজিয়ার বিপক্ষে জয়ের বিকল্প হিসেবে আর কিছু দেখছেন না। তিনি প্রি-ম্যাচ প্রেস কনফারেন্স বলেন, “এফসি কাপ সবসময় কঠিন হয়। তাই আমরা পুরোপুরি দৃষ্টি দিয়েছি সেখানে। ভালো পারফরম্যান্স করে দেখাতে চাই। প্রথম ম্যাচ জয় পেয়ে পয়েন্ট নেওয়ার লক্ষ্য আমাদের।”
জয় পেতে মরিয়া হলেও প্রতিপক্ষকে সমীহ করছেন ব্রুজন। তার মতে মাজিয়া ম্যাচটিতে স্বাগতিক হিসেবে সুবিধা পাবে,যা তাদের ভালো পারফরম্যান্স করতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিপক্ষ হোম অ্যাডভান্টেজ পাবে। তাদের দলে জুনিয়র ও সিনিয়র মিলে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা আছেন। সুতরাং আমাদের যে করেই হোক ভালো পারফরম্যান্স করে দেখাতে হবে।”
অন্যদিকে কিংসের বিপক্ষে ম্যাচটি মাজিয়া জন্য বড় রকমের একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে মাজিয়ার হয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন সাইবেরিয়ান ফরোয়ার্ড স্টিফেন মিয়াজলোভিচ, ভোজিস্লাব বালাবানোভিচ, লিথুনিয়ার সেন্টার ব্যাক এডগারাস জার্সকিস এবং স্বদেশী মিডফিল্ডার হামজা মোহাম্মদ।
দুই সাইবেরিয়াম ফরোয়ার্ড জুটি মিয়াজলোভিচ, বালাবানোভিচ মাজিয়ার হয়ে চলতি মৌসুমে মোট ৫ টি গোল করেছেন। এএফসি কাপের মতো বড় পর্যায়ে কিংসের বিপক্ষেও গোল করার জন্য এই জুটি গোল মুখিয়ে থাকবেন।
মাজিয়ার মাঝমাঠে থাকবেন হামজা মোহাম্মদ। মাজিয়ার জার্সিতে এই মিডফিল্ডার পাঁচ পাঁচটি মৌসুমে খেলেছেন। এর পাশাপাশি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে এএফসি কাপে তার পরিসংখ্যানও অনেক ভালো। ২৩ ম্যাচ খেলে ১ গোল এবং ৩ টি এসিস্ট করেছেন তিনি। তাই তিনি অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যানের বিচারে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে হয়ে উঠতে পারেন মাজিয়ার বাজির ঘোড়া। মাজিয়া স্পোর্টসের রক্ষণভাগের দায়িত্ব ন্যাস্ত হবে লিথুনিয়ার ডিফেন্ডার এডগারাস জার্সকিসের কাছে। কিংসের আক্রমণভাগের জন্য সমস্যা তৈরি করাই হবে তার মূল কাজ।
পরিসংখ্যান এবং সামর্থ্যের বাইরে ফুটবল হলো মাঠের খেলা। মাঠের খেলায় যে দল ভালো করবে এবং সফল হতে পারবে তারাই জয়ের হাসি হাসতে পারবে। মাজিয়ার কোচও তেমনটাই বলেছেন। তার মতে ফুটবল একটা আনপ্রেডিক্টেবল গেম। ম্যাচে সবারই জয়ের সুযোগ থাকে। তাই তারা লড়াই করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, “ফুটবল একটা আনপ্রেডিক্টেবল গেম। এখানে সবারই জয়ের সুযোগ থাকে। আপনি যদি গোল নাও করতে পারেন হতে পারে আপনি আত্মঘাতী গোলে ম্যাচে জয় পেয়ে যাবেন। এই জন্য আমাদের লক্ষ্য সামনে দিকে। এই ম্যাচে দুই দলই বেশ অভিজ্ঞ। মালদ্বীপের খেলোয়াড়দের বাংলাদেশের সাথে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি মনে করি এটি অনেক ভালো একটি ম্যাচ হতে যাচ্ছে।”
ফুটবল একার খেলা নয়,পুরো দলের পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে ফুটবলে জয় পরাজয় আসে। মাজিয়ার অধিনায়কের মতে আগামীকালের ম্যাচের ফলাফলও দলীয় পারফরম্যান্সের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, “ঘরের মাঠে খেলা যেকোনো দলের জন্য ভালো সুবিধা তৈরি করে দেয়। আগামীকালের ম্যাচে কি হবে সেটা দলের খেলোয়াড়দের দলীয় পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করছে। যারা যত ভালো করবে তারাই জয় পাবে। আমি আশা করি ইনশাআল্লাহ আমরা ম্যাচে তিন পয়েন্ট পাবো।”
কিংস এবং মাজিয়ার দুইদলই তাদের প্রথম ম্যাচের একে অপরের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। দুইদলই চাইবে জয় দিয়ে নিজেদের মিশন শুরু করতে। তাতে কোন দল সফল হবে এবং কোন দলের পরিশ্রম বিফলে যাবে তা শুধু তাদের মাঠের পারফরম্যান্সই বলে দিবে।