সাঈদ ইবনে সামসঃ ২০২১-২২ মৌসুম শুরু হয়েছে স্বাধীনতা কাপ দিয়ে। এরপরই বাফুফে মৌসুমের দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপে সূচি ঘোষনা করেন এবং ফেডারেশন কাপের পর শুরু হওয়ার কথা প্রিমিয়ার লীগ। কিন্তু এরই মধ্যে ফেডারেশন কাপ থেকে নাম সরিয়ে নিয়েছে গতবারের ফেডারেশন কাপ ও প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস, উত্তর বারিধারা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেসি।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ চলায় এবারের স্বাধীনতা কাপ অনুষ্ঠিত হয় কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে। সেই ন্যায়ে ফেডারেশন কাপও কমলাপুরে করার পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর একদিন আগেই টুর্নামেন্টে না খেলার কথা নিশ্চিত করে বসুন্ধরা কিংস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেসি ও উত্তর বারিধারা। বসুন্ধরা কিংসের প্রধান স্পন্সর বসুন্ধরা গ্রুপ আবার ফেডারেশন কাপেরও স্পন্সর।

না খেলার কারন হিসেবে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি বলেন বাফুফে নির্দিষ্ট কোনো ক্লাবকে সুবিধা দিতে ফিক্সচার এবং তারিখ পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে স্বাধীনতা কাপ চলাকালীন বসুন্ধরার প্রধান কয়েকজন ফুটবলার মারাত্মক ইনজুরিতে পড়েন। যার মধ্যে অন্যতম ডিফেন্ডার তপু বর্মন, তারিক কাজী এবং জোনাথন ফার্নান্ডেজ। চোটে পড়ার মূল কারন হিসেবে অনেকে কমলাপুরের টার্ফের মাঠকে দায়ী করছেন।

আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে সাধারনত টার্ফে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় কম। এছাড়া আমাদের দেশে শুধু দুই জায়গায় টার্ফ রয়েছে যেখানে আমাদের খেলোয়াড়রা নিয়মিত অনুশীলন করেন না। এতে করে বলা যায় তাদের টার্ফে খেলতে অভ্যস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়াও মাটির মাঠ এবং টার্ফের মধ্যে রয়েছে বিস্তর তফাৎ। টার্ফের মাঠ মাটির মাঠের তুলনা তুলনামূল শক্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। তাই টার্ফের মাঠে খেলতে হলে শক্তি ক্ষয় বেশি হয়। টার্ফে সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়ার সম্ভবনা মাটির মাঠের তুলনায় অনেক বেশি। টার্ফের নিচে সাধারনত কংক্রিটের একটি স্তুর দেওয়া হয় এবং এর উপরে বসানো হয় টার্ফ এতে করে, খেলোয়াড়দের হাঁটু এবং গোড়ালির চোটের সম্ভবনা বেশি থাকে। এছাড়া পেশি টান, হ্যামস্টিং, লিগামেন্ট ইনজুরি সমস্যা তো রয়েছেই। অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে ফুটবলাদের পায়ে ফোসকা পড়ে যায় যা অবশ্যই ফুটবলারদের জন্য ক্ষতিকর।

আমরা বাইরের দেশগুলোতে দেখি ফুটবলাররা টার্ফে অনুশীলন করে, পাশপাশি খেলাও হয় তবে এর জন্য প্রয়োজন মাঠের সঠিক পরিচর্যা। টার্ফের যেই পরিমাণ রক্ষনাবেক্ষন প্রয়োজন তা বাফুফে করছে না তা স্পষ্ট। বর্তমান সময়ের কথাই ধরুন। স্বাধীনতা কাপের  সাথে সাথেই এই মাঠে শুরু হয় সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশীপ এবং এর পরপরই শুরু হয়েছে  ফেডারেশন কাপ। উল্লেখ্য যে, তৃতীয় বিভাগ ফুটবল চলাকালীন সময়ে দিনে টানা ৫ টি খেলাও হয়েছে এই টার্ফেই। যেখানে ফিফা থেকে বলা আছে মাঠ ৩-৪ ঘন্টার বেশি ব্যবহার না করার। রক্ষনাবেক্ষন সঠিকভাবে না হওয়ায় ফুটবলারদের ইনজুরির সম্ভবনা আরো বেশি বেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবল বেশিভাগই টার্ফে হয় এবং তাদের অনুশীলনও টার্ফেই করানো হয়। এতে করে তাদের ফিটনেস এবং খেলার ধরন টার্ফ অনুযায়ী হয়ে গিয়েছে। তবে তাদের সাথে পুরুষদের খেলার তুলনা দেয়াটা কিছুটা অবাস্তবই। মেয়েদের খেলার ধরনের সাথে পুরুষদের খেলার ধরণ ভিন্ন এবং এই দুইয়ের মধ্যে তুলনা দিয়ে প্রায় পরিত্যক্ত এই টার্ফের পক্ষে সাফাই গাওয়া হাস্যকরও বটে। বাংলাদেশের পেশাদার লীগের কোনো ফুটবলাররা টার্ফে অনুশীলন করে না এবং নিয়মিত তাদের খেলাও হয় না, তাহলে তারা কিভাবে এই মাঠের সাথে দুইটি টুর্নামেন্টেই মানিয়ে নিবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বাফুফের কাছে। ফিটনেসের বিষয়টা অবশ্য সঠিক, ম্যাচের আগে কঠোর জিম সেশন করলে হয়তো ইনজুরিতে পড়ার সম্ভাবনা কমবে। কিন্তু অফসাইডের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খেলোয়াড় বলেছিলেন তার ইনজুরি হয়েছে মাঠে কারণেই। মাঠের একটি অংশে শট নিতে যাওয়ার সময় টার্ফ নিচের দিকে চলে যায়, যে কারণে তিনি শরীরের ভারসাম্য হারান এবং পুরো প্রেসার তার ঐ পায়ে পড়ে।

যেহেতু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কার চলছেই, দুইটি টুর্নামেন্ট বাফুফে চাইলে ঢাকার বাইরে আয়োজন করতে পারতো। এতে দেশের ফুটবলে নতুন আমেজ যোগ হতো। চট্টগ্রাম এবং সিলেটে দুইটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা গেলে একটি নতুন মাত্রা যোগ হত দুইটি টুর্নামেন্টেই। কিন্তু বাফুফে আজো ঢাকা কেন্দ্রিক ম্যাচ আয়োজন থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি। তাই আবারো ঘুরিয়ে প্রশ্ন আসছে অন্ধকার এই সময়ে কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল?

তবে কি শুধু বাফুফে’কে দোষারোপ করলে বিষয়টি শেষ? না, এমনটি নয়। ঢাকা কেন্দ্রীক এই খেলার দায় নিতে হবে ক্লাবগুলোকেও। কেননা নিজেদের খরচ বাঁচাতে ঢাকাতেই খেলতেই বেশি আগ্রহী ক্লাব কর্তৃপক্ষরা। এই বিষয়টি বাস্তবায়ন সম্ভব হয় বাফুফের কমিটিতে থাকা ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে। বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে বাফুফের নির্বাচিত সহ-সভাপতিকে উক্ত প্রতিষ্ঠানই নোটিশ দিচ্ছে জবাবদিহিতার জন্য। তাহলে কিভাবে সাধারণ ফুটবল প্রেমীরা বিশ্বাস করবেন যে এই লোকরাই সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করবে এবং দেশের ফুটবলের উন্নয়ন হবে।

Previous articleঅবশেষে মাঠে গড়ালো ফেডারেশন কাপ!
Next articleশাস্তি পেল বসুন্ধরা কিংস ও উত্তর বারিধারা ক্লাব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here