কুড়িগ্রাম সদরের চা দোকানদার মোঃ সেকান্দার আলীর দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে মোঃ মেহেদী হাসান। ছেলেকে ফুটবলার হিসেবে তৈরি করার স্বপ্নে জারা গ্রীন ভয়েজ কিশোর বাংলা ফুটবল ক্লাবের কর্মকর্তা আশিকুর রহমান আশিকের হাতে তুলে দেন তিনি। গতকাল ঢাকা পাইওনিয়ার ফুটবল লিগে নিজের অভিষেকেই মাত্র এগারো বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেনীর এই খেলোয়াড় নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ছেলের এই ফুটবলার হয়ে উঠা দেখে যেতে পারলেন না তার পিতা।

কুড়িগ্রাম সদরের আমিন বাজার কেতার মোড়ের বাসিন্দা মোঃ সেকেন্দার আলীর ছেলে মেহেদী কুড়িগ্রামে অবস্থিত ফুটবলের জমিদার বাড়ি নামে আবাসিক একটি ক্যাম্পে অনুশীলন শুরু করেন। তার প্রতিভা দেখে আদর করে সবাই তাকে ‘মেহেদী মেসি’ নামে ডাকা শুরু করে। কিন্তু ঢাকা পাইওনিয়ার ফুটবল লিগের মেডিকেলের কয়েকদিন আগে থেকে অনুশীলনে আসা বন্ধ করে দেয় মেহেদী। জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা জালাল হোসেন লাইজু মেহেদীর বাবার সাথে যোগাযোগ করে তাকে অনুশীলনে পাঠানোর অনুরোধ করেন। এরপরই মেহেদীকে আনতে তার বাড়ি পৌঁছান ক্লাব কর্মকর্তা আশিক। মেহেদীর বাবাকে যখন আশিক তার ছেলেকে ফুটবল খেলতে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন তখন তার বাবা ছেলেকে আশিকের হাতে তুলে দিয়ে বলেন, ‘আজ থেকে আমার ছেলের সব দায়িত্ব আপনাদের, ওকে ফুটবলার বানান।’ কিন্তু সেদিনই রাত ১০ টায় হার্টস্ট্রোক করে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মারা যান সেকান্দার আলী। মাত্র পঞ্চম শ্রেনী পড়ুয়া মেহেদী হয়তো বুঝতেই পারেননি পিতা হারানোর শোকটা কি।

এরপরই ঢাকায় আসে জারা গ্রীণ ভয়েজ কিশোর বাংলা ফুটবল ক্লাব। গোপীবাগস্থ  ব্রাদার্স ইউনিয়ন মাঠে অনুশীলন শুরু করে তারা। কিন্তু সেখানে দেখা যায় বুট বিহীন অনুশীলন করছে মেহেদী। এতো দারিদ্র্যতার মাঝেও ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন সে ছাড়তে রাজি নয়। প্রথম ম্যাচে তার দলের ১৯-০ গোলে জয়ের দিনে তিন গোল করে মেহেদী। তার প্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি হলেও নিজের হ্যাট্রিক পূর্ণ করে আরেক তারকা রোনালদোর ‘সুই’ উদযাপন করে সে জানান দেয়, বিশ্ব সেরাদের মতো সেরা হতেই মাঠে নেমেছে। একদিন জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখা মেহেদীকে এগিয়ে নিতে হবে আমাদেরই।

Previous articleপাইওনিয়ার লীগ’-এর আজকের দিনের হালচাল
Next article১৪ বছর পর ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here