অবশেষে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে দ্বিতীয়বারের মতো অবনমন প্রায় নিশ্চিত আরামবাগ ক্রীড়া চক্রের। যদিও লীগে এর আগেই আরামবাগের অবনমন প্রায় সম্ভাব্য ছিলো। কিন্তু আজ সোমবার উত্তর বারিধারার কাছে ১-০ গোলে হারের পর এই সম্ভবনা হাতে-কলমে প্রায় নিশ্চিত।
আজ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা লড়াইয়ে কমলাপুর স্টেডিয়ামে উত্তর বারিধারার মুখোমুখি হয় আরামবাগ। কিন্তু রাশেদুল ইসলাম শুভ একমাত্র গোলে জয় পায় উত্তর বারিধারা। ফলে নিজেদের শেষ রক্ষা করতে পারে নি আরামবাগ।
১৯৫৮ সালে ফুটবলের উপর ভিত্তি গড়ে উঠে আরামবাগ ক্রীড়া চক্র। পরে যদিও বাস্কেটবল,ভলিবল ও হ্যান্ডবলে নিজেদের যোগ করে ক্লাবটি। শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত অনেক কৃতি খেলোয়াড় উঠে এসেছে আরামবাগের এই দলটি থেকে। দেশের বাইরে সবার আগে ট্রফি জয়ের কৃতিত্বও রয়েছে এই আরামবাগের দখলে। ১৯৮১ সালে আনফা কাপে রার্নাসয়াপ হয় এই দলটি।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ থেকে। সেই সময় থেকে এই পর্যন্ত দুইবার অবনমনে পড়ে দলটি। ২০১২-১৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অবনমনের সাক্ষী হয় আরামবাগ। সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠেছে দুইবছর পর ২০১৫-১৬ চ্যাম্পিয়নশীপ লীগে রার্নাসয়াপ হয়ে প্রিমিয়ার লীগের মঞ্চে আবারো ফিরে আসে দলটি।
২০১৬-১৯ এই তিনবছর ছিলো আরামবাগের স্বর্ণযুগ। দলের তৎকালীন সভাপতি মমিনুল হক সাইদ আরামবাগকে এক ভিন্ন রূপে গড়ে তুলেছিলো। সাইফুল বারী টিপু ও মারুফুল হক এই দেশে সেরা দুই কোচের অধীনে ছিলো আরামবাগ। তাদের অধীনে থাকাকালীন দলটি প্রিমিয়ার লীগে তেমন একটা পারফরম্যান্স করতে পারলেও টুর্ণামেন্টে নিজেদের কৃত্বিতের সাক্ষর রাখে দলটি। টিটুর অধীনে ফেডারেশন কাপে রার্নাসয়াপ হয় দলটি। মারুফুল হকের অধীনে পরবর্তী মৌসুমে দেশীয় খেলোয়াড় নিয়ে গড়ে উঠা দলটি মাথায় আসে স্বাধীনতা কাপের শিরোপা মুকুট।
কিন্তু সুখ বেশীদিন দলটি সাথে ছিলো না। ক্যাসিনো কান্ডে জড়িয়ে দলটি চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যায়। সভাপতি মমিনুল হক সাইদ ক্যাসিনো কান্ডে দেশ ত্যাগ করেন। এতে অভিভাবকশূন্য হয়ে দলটি। পাশাপাশি দেখা দেয় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংকট। যদিও সেই যাত্রা এলাকার লোকজনের চাঁদা ও বসুন্ধরার সহয়তায় কিছুটা প্রাণ ফিরে আরামবাগ এবং দল গঠন করে। খেলার মাঠে তেমন কোনো কৃতিত্ব দেখাতে না পারলে করোনার কারণে লীগ স্থগিত হয়ে গেলে বেঁচে যায় আরামবাগ।
কিন্তু খারাপ সময় যেনো পিছুই ছাড়ছিলো না আরামবাগের। আর্থিক সংকটে পড়ে দলটি এক বিশেষ ব্যক্তির অধীনে চলে যায়। তিনি দলের জন্যে কোচ ও খেলোয়াড়ে বদল আনেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বেটিং কান্ডে জড়িয়ে যায় দলটি। লীগে পাতানো ম্যাচ পুরাতন হলেও,বেটিং ছিলো একদমই নতুন। যা আরামবাগের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছে বলে ফুটবলসংশ্লিষ্টদের ধারণা।
প্রথম লেগের পর দ্বিতীয় লেগে পুরোনোরা দলে ফিরেন। কিন্তু এতে ভাগ্য বদলায় নিই আরামবাগে। দ্বিতীয় লেগের সুখ স্মৃতি বলতে শুধুমাত্র শেখ জামালের বিপক্ষে জয়। বর্তমান লীগে ২১ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার সবার শেষে আছে দলটি। চলমান লীগে অবনমনের শিকার হবেন পয়েন্ট তালিকায় সবার শেষে থাকা দুই দল। আরামবাগের হাতে থাকা বাকি তিনম্যাচে জয় পেলেও টেবিলের ১১ তম স্থানে থাকা মুক্তিযোদ্ধার থেকে এক পয়েন্টে পিছিয়ে থাকবে। তাই কোনোভাবেই অবনমন এড়াতে পারবে না আরামবাগ। এতে দেশের ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে ফিরতে আরামবাগের কতদিন লাগবে সেটিই এখন দেখার পালা।