বরিশাল ফুটবল একাডেমির শ্রেষ্ঠত্বে শেষ হয়েছে এবারের পাইওনিয়ার ফুটবল লিগ। প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা ৪৬ দলের এই লিগের ফাইনালে শুক্রবার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় জারা গ্রিন ভয়েজ ফুটবল একাডেমিকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে বরিশাল ফুটবল একাডেমি। আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বরিশাল ফুটবল একাডেমির রায়হান মিয়া এবং ফাইনালে সেরা হয়েছেন জারা গ্রিন ভয়েজের আকাশ। টুর্নামেন্ট সেরা এবং ফাইনাল সেরার পুরস্কার চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দলের ফুটবলারদের কাছে গেলেও শীর্ষ গোলদাতার পুরস্কার গিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়া এক ক্লাবের ফুটবলারের কাছে! ১৫ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার মুকুট জিতেছেন স্কাইলার্ক ফুটবল ক্লাবের মেহেদী হাসান মিনার। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও টুর্নামেন্টের ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড জিতেছে মিনারের ক্লাব স্কাইলার্ক।

কোয়ার্টার ফাইনালে দল বাদ পরায় বেশ হতাশ এই ফরোয়ার্ড। পুরো টুর্নামেন্টে দূর্দান্ত খেলা তার দল ভাগ্যের নির্মম পরিহাসেই যেন ছিটকে পড়ে। তারপরও ৬ ম্যাচে ১৫ গোল করে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পেরে উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারের এই ফুটবলার। পাইওনিয়ার লিগের শীর্ষ গোলদাতা হওয়ার পর অফসাইডের কাছে নিজের অনুভূতি জানান মিনার, “পাইওনিয়ার লিগে সেরা গোলদাতা হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে দল বাদ পরে যাওয়ায় আমাদের আক্ষেপ রয়েছে। নাহলে আরো কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারতাম আমরা এবং আমি হয়তো আরো কয়েকটা গোল করে দলকে সহযোগিতা করতে পারতাম।  তারপরও সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ্।”

গ্রুপ পর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত স্কাইলার্ক ফুটবল ক্লাব খেলেছে ৯ ম্যাচ, তার মধ্যে ৬ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন মিনার। আর এই ম্যাচেগুলোর মধ্যে গেন্ডারিয়া পাওয়ার সান এফসির বিপক্ষে ৩ গোল, গাজীরচট ফুটবল একাডেমির বিপক্ষে ৫ গোল, নবাবগঞ্জ ফুটবল একাডেমির বিপক্ষে ৪ গোল, ফেনী স্পোর্টস একাডেমির বিপক্ষে ১ গোল করেছেন মিনার। পাইওনিয়ার ফুটবল লিগের চ্যাম্পিয়ন বরিশাল ফুটবল একাডেমিকে সুপার লিগের ৪-৩ গোলে পরাজিত করে মিনারের দল স্কাইলার্ক ফুটবল ক্লাব। সেখানেও মিনারের অবদান দুই গোল।

শুধু পাইওনিয়ার লিগ নয়, এর আগে ২০১৭ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয় ভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্ট বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও শীর্ষ গোলদাতা হয়েছিলেন তিনি। এরপর এই প্রতিভাবান ফুটবলার আর ঢাকার মাঠে ফিরতে পারে নি। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ফুটবলার উঠে আসার মঞ্চ এই পাইওনিয়ার লিগের নবাগত দল স্কাইলার্ক তাকে আবারো ফিরিয়ে আনে ঢাকায়। নিজের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে অফসাইডের কাছে মিনার বলেন, “ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলা। দেশের ফরোয়ার্ডদের নিয়ে সবাইকেই আক্ষেপ করতে দেখা যায়। সুযোগ পেলে আমি এই আক্ষেপ ঘোচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”

ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি অনুরাগী ছিলেন মিনার। বড় দুই বোনের পর মিনার, তারপর আরেক বোনকে নিয়ে তার পরিবার। তার বাড়ির আশেপাশে ফুটবল অনুশীলনের কোন ভালো ব্যবস্থা নেই। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হয়েও প্রতিদিন ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে অনুশীলন করতে যাওয়া তার ফুটবলের প্রতি অসীম ভালোবাসারই প্রমান। মিনারের কৃষক বাবাও কখনো ছেলের ফুটবল প্রেমে বাঁধা হয়ে দাঁড়াননি। বরং নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে ছেলেকে ফুটবলার হতে সাহায্য করেছেন। পাইওনিয়ার লিগের সেরা গোলদাতা হওয়ার আনন্দে তাই এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন মিনারের বাবা। মিনারের পরিবার, তার কোচ এবং এলাকাবাসী তার সাফল্যে ভীষণ খুশি। আর সবার এই খুশিটা আরো প্রসারিত করতে চান মিনার। মিনারের প্রাথমিক লক্ষ্য বাফুফে এলিট একাডেমিতে জায়গা করে নেওয়া। এছাড়া বাফুফের কাছে পর্যাপ্ত সুযোগের প্রত্যাশা এই উঠতি ফুটবলারের, “অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার সুযোগের অভাবে হারিয়ে গেছে।  আমার সাথের অনেক ফুটবলার সময়ের সাথে হারিয়ে গেছে। তাই বাফুফের কাছে আমার অনুরোধ যেন আরো কিছু টুর্নামেন্ট আয়োজন করে খেলার সুযোগ করে দেয়, যাতে আমাদের মত ফুটবলাররা নিজেদের প্রমাণ করতে পারে।”

ফুটবলে মিনারের আইডল পিএসজি ও ব্রাজিলের তারকা নেইমার। নেইমারের স্কিলের বড় ভক্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের উইঙ্গার মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং বসুন্ধরা কিংসের অধিনায়ক রবসন রবিনহোকেও আইডল হিসেবে মানেন মিনার। ভবিষ্যতে তাদের মত স্কিলফুল ফুটবলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চান তিনি। মিনারের মতোই আরো অনেক উঠতি তারকা ফুটবলারের দেখা মিলেছে পাইওনিয়ার লিগে। এখন বাফুফের কাজ ভবিষ্যতের জন্য তাদেরকে তৈরি করা। হয়তো একদিন এই তরুণদের হাত ধরেই ফিরবে দেশের ফুটবলের সুদিন।

Previous articleপাইওনিয়ার লিগের শিরোপা বরিশাল ফুটবল একাডেমির!
Next articleঅ-২০ ফুটবল দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পেলেন বিজন বড়ুয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here