আগামী ৭ ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আসন্ন এই নির্বাচনের উত্তাপ মাঠ ঘাট ছাড়িয়ে প্রবেশ করেছে দেশের ফুটবল অঙ্গনেও। এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েক ফুটবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিও লড়াইয়ে নামবেন, যার মধ্যে কারো প্রতীকী চিহ্ন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা আবার কেউ বা লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

আসন্ন নির্বাচনে ফুটবল অঙ্গনের সবচেয়ে বড় নাম সালমান এফ রহমান। ঢাকা-১ আসন থেকে নৌকার পদপ্রার্থী হিসেবে লড়বেন আবাহনী লিমিটেডের চেয়ারম্যান। সরাসরি ফুটবল ফেডারেশনে যুক্ত না থাকলেও দেশ সেরা ক্লাব আবাহনীর দায়িত্ব অনেকদিন ধরেই সামলাচ্ছেন দেশের বড় এই ব্যবসায়ী। তিনি এর আগে ২০০১ সালে নৌকার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। গত নির্বাচনে ৮৬.৫% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। আসনে তার প্রতিপক্ষ জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম আস্থাভাজন সালমান এফ রহমানকে পরাজিত করা প্রায় অসম্ভবই।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পরিচিত মুখ হিসেবে নৌকার মাঝি হয়েছে সাবেক ফুটবলার এবং বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। খুলনা-৪ আসনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন। একই আসনে স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী হিসেবে আছেন ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ মোর্তজা রশিদী দারা। জনপ্রিয়তাও বেশ ভালোভাবে পাচ্ছেন দারা। অন্যদিকে মুর্শেদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার মানুষের খোঁজখবর রাখেন না। এতে করে স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো মোর্তজা রশিদী দারা মুর্শেদীকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন নৌকা প্রতীকই হয়তো সালাম মুর্শেদীর জয়ের কারণ হয়ে দাড়াবে।

মুর্শেদী নৌকা মাঝি হতে পারলেও নৌকার মাঝি হতে পারেন নি বাফুফের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। নোয়াখালী-২ আসনে নৌকা মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাকে মনোনীত করেন নি, বিপরীতে দলটি মোরশেদ আলমকে নৌকার মাঝি হওয়ার সুযোগ দেয়। মনোনীত না হওয়ায় স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন তমা গ্রুপের কর্নধার। ২০২০ সালে বাফুফের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ফুটবল উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন মানিক। তাই এলাকায় তার জনপ্রিয়তাও বেশ খানিকটা রয়েছে। এরফলে নৌকা মাঝি মোরশেদ আলমকে নির্বাচনী লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন মানিক। কিন্তু তার একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী অপপ্রচারের অভিযোগ এনে মামলা করেছে যা এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বড় একটি বাঁধাই বলা চলে।

মানিকের মতো নির্বাচনের ময়দানে রয়েছেন বাফুফের আরেক সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। যশোর-৩ আসন থেকে নৌকার পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ময়দানে নেমেছেন নাবিল। ২০১০ যশোর-৩ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন ঐতিহ্যবাহী দল আবাহনী লিমিটেডের এই ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ইনচার্জ। ২০১৪ সালেও তিনি যশোর-৩ থেকে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এইবার একই আসন থেকে তৃতীয়বারের জন্য আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত হয়েছেন নাবিল আহমেদ। তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে উক্ত আসনে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ইত্যাদি দলের প্রার্থী রয়েছেন। তবে নিজ এলাকায় কাজ করে সুনাম কুড়িয়েছেন নাবিল, যা এবার তাকে জয় এনে দিবে বলে আশাবাদী।

আরো আছেন সাবেক ফুটবলার আরিফ খান জয়, হাসানুল হক ইনু ও দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনীত হন নি সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ খান জয়। নৌকা প্রতীকে মনোনীত না হওয়ার কারণে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন জয়। তিনি নেত্রকোনা-২ আসন থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামছেন।

হাসানুল হক ইনু দেশ স্বাধীনের পূর্বের নামকরা ক্লাবগুলোর হয়ে ঢাকার ফুটবলে খেলেছেন, এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও ওয়ারী ক্লাব। সাবেক এই গোলরক্ষক কুষ্টিয়া-২ আসনের নৌকা মাঝি হিসেবে মনোনীত হয়েছে। আওয়ামিলীগের আস্থাভাজন হয়ে উঠা ইনুর জয় শুধু সময়ের ব্যাপার বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আরেক জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল। আওয়ামীলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া মোড়া প্রতীয় নিয়ে মানিকগঞ্জ -২ আসনে লড়বেন। পূর্বে এলাকায় সেবা করায় জয়ে বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

Previous articleবাফুফের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হয়ে যা বলছে বিকেএসপি
Next articleচলে গেলেন ‘মোহামেডানের জহির’!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here