বাংলার ফুটবলে বহুদিনের পদচারণা রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির। আজ থেকে প্রায় ৮৯ বছর আগে ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পুরান ঢাকার ক্লাবটি। বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে বড় দলগুলোর পয়েন্ট কেড়ে নিয়ে ‘জায়ান্ট কিলার’ হয়ে উঠেছে রহমতগঞ্জ। পাশাপাশি সবশেষ তিন বারের ফেডারেশন কাপের দুবারই ফাইনাল খেলে সবাইকে চমকে দিয়েছে পুরান ঢাকার জায়ান্টরা। তবে দুবারই রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে সৈয়দ গোলাম জিলানীর শিষ্যদের।

একসময় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে খেলোয়াড় তৈরির ‘আঁতুড়ঘর‘ হিসেবে পরিচিত ছিল ঢাকা মহানগরীর আদি অঞ্চল ‘পুরান ঢাকা‘। বাংলাদেশের প্রায় সকল ক্রীড়াক্ষেত্রেই নামিদামি অ্যাথলেট উপহার দিয়েছে এই পুরান ঢাকা। কায়সার হামিদ, পনির, আলফাজসহ জাতীয় পর্যায়ের অনেক খেলোয়াড় উঠে এসেছেন এই অঞ্চল থেকে। লালবাগ স্পোর্টিং ক্লাব, ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব, নবাবপুর স্পোর্টিং, মুসলিম ফ্রেন্ডস, কসাইটুলি ক্লাব, মাহুতটুলি স্পোর্টিং ক্লাবের মতো দলগুলোর দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ছিলো সরব উপস্থিতি। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গিয়েছে বা হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলো। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে এখন পুরান ঢাকার একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। এককথায় বলা যায় দেশের ফুটবলে তো বটেই পুরো ক্রীড়াঙ্গনে পুরান ঢাকাকে বাঁচিয়ে রেখেছে রহমতগঞ্জ।

দলবদলের সময় প্রতিবারই খুব একটা আলোচনায় থাকে না রহমতগঞ্জ। স্বভাবতই এবারও তেমন একটা আলোচনায় ছিলো না রহমতগঞ্জ। তবে ঢাকার মাঠের পরিচিত ফুটবলারদের দলে ভিড়িয়ে সাফল্যের যে পরিকল্পনা এটেছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ, তা যে ভুল ছিল না তার প্রমাণ মিলেছে ফেডারেশন কাপে। শেখ রাসেল, মোহামেডানের মতো দলকে হটিয়ে মৌসুমের দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপের ফাইনালে খেলে রহমতগঞ্জ। গত মৌসুমে রহমতগঞ্জের হয়ে খেলা চার বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে কাউকেই এই মৌসুমে দলে রাখেনি পুরান ঢাকার ক্লাবটি। বিদেশি কোটায় রহমতগঞ্জে যোগ দিয়েছেন ঘানার ফরোয়ার্ড ফিলিপ আদজা। এছাড়া আবাহনীর ঘরের ছেলে বনে যাওয়া নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড সানডে চিজোবার সাথে গত মৌসুমে পুলিশ এফসিতে খেলা ডিফেন্ডার লেন্সিং তোরে এবং শেখ রাসেলে খেলা আরেক ডিফেন্ডার সিয়োভুস আশরোরভকে নতুন মৌসুমের জন্য দলে ভিড়িয়েছে ক্লাবটি। তবে গত মৌসুমে রহমতগঞ্জের হয়ে অধিনায়কত্ব করার পাশাপাশি দুর্দান্ত পারফর্ম করা গোলকিপার রাসেল মাহমুদ লিটনকে দলে রাখতে পারেনি রহমতগঞ্জ। তবে ওয়ালি ফয়সাল, জিয়াউর রহমানদের মতো জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলারকে দলে যুক্ত করেছে ক্লাবটি। সানডে, ওয়ালি, জিয়াদের মতো ঢাকার মাঠে খেলার অভিজ্ঞতায় টইটুম্বুর ফুটবলারদের সাথে কিরণ, স্বাধীন, নয়ন, তুষার, এনামুলদের মতো তরুণ তুর্কিরা রয়েছেন রহমতগঞ্জের ডেরায়। অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে দুর্দান্ত কম্বিনেশন গড়ে তুলতে পারলে নিজেদের দিনে যেকোনো কিছুই ঘটাতে পারে সৈয়দ গোলাম জিলানী শিষ্যরা।

বর্তমানে ফুটবলে পুরান ঢাকার প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র ক্লাব হিসেবে রহমতগঞ্জের রয়েছে দারুন স্থানীয় সমর্থন। প্রত্যেকটা মহল্লার যুবক, মাঝ বয়সী মানুষ, ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ এমনটি গৃহিণীরাও নিয়মিতই খোঁজ রাখেন ক্লাবটির। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠায় তো পুরান ঢাকায় ছোটখাটো একটা ঈদের আমেজ তৈরি করে ফেলেছিল রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। তবে গত মৌসুমে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ২৪ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে ৮ম স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছিল রহমতগঞ্জ। এই মৌসুমে স্বাধীনতা কাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়ে দর্শকদের হতাশ করলেও ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলে নতুন মৌসুমের জন্য বাকি দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রেখেছে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। দেখা যাক নতুন মৌসুমে নিজেদের ‘জায়ান্ট কিলার’ তকমা কতোটা ধরে রাখতে পারে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। সেই সাথে পুরান ঢাকার এই ফুটবল প্রেমী মানুষদের কতোটা আনন্দে ভাসাতে পারে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি সেটাও এখন দেখার বিষয়।

Previous articleস্থানীয় সমর্থন কেন কাজে লাগাচ্ছে না চট্টগ্রাম আবাহনী?
Next articleКазино Aviator Открылось В Грузии

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here