আরেফিন জিসান : সময়ের বিচারে ৫২৫ দিন পার হয়ে গেছে! গত বছরের ১১ই মার্চ এশিয়ার ক্লাব পর্যায়ে সর্বশেষ খেলেছিলাম আমরা, যখন বসুন্ধরা কিংস হোম লেগে ৫-১ স্কোরলাইনে উড়িয়ে দিয়েছিল মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসকে। এরপর শুধুই করোনায় হতাশা।

এবং আবার আমরা ফিরে আসলাম এশিয়ার ইউরোপা কাপে! গত মে’তে করোনার অজুহাতে এএফসি’র অন্যায়ভাবে ঢাকা আবাহনীকে বাদ দেয়া, মালদ্বীপে ব্যাঙ্গালুরু এফসি’র (ভারত) ২ জন খেলোয়াড় ও ১ জন স্টাফের বায়োবাবল ভঙ্গ করে রাত-বিরাতে হোটেলের বাইরে ঘুরে বেড়াবার জের ধরে আমাদের দক্ষিণ এশীয় গ্রুপের খেলা স্থগিত হয়ে যাওয়া যার ফলশ্রুতিতে সব কিছু গুছিয়েও এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হতেও বসুন্ধরা কিংস এর যাত্রাভঙ্গ! মাঝের সময়টাতে বার বার গ্রুপের খেলা বাতিল হয়ে যাবার আশঙ্কার পরও অবশেষে অনিশ্চয়তা দূর করে সেই মালদ্বীপেই খেলতে যাচ্ছি আমরা।

যে কোন সময়ের বিচারে এবারের এএফসি কাপের তাৎপর্য অনেক বেশি বাংলাদেশের ফুটবলে। প্রায় ২ যুগ পর এশিয়ার সেরা ক্লাব আসর, এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ফিরে আসবার দারুণ এক সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের। ২০১৯ সালে ঢাকা আবাহনী সেই পথে এনে দিয়ে গেছে, বাকিটা নির্ভর করছে বসুন্ধরা কিংস এর ওপর। অবশ্য তা সহজ হবে না অবশ্যই। বসুন্ধরাকে ন্যুনতম নক আউটে যেতে হবে আগে। তারপর তাজিকিস্তান, কুয়েত ও সিরিয়ার ক্লাবগুলোর ফল দেখতে হবে।

ব্যাঙ্গালুরু এফসি বনাম ক্লাব ঈগলস (মালদ্বীপ) এর যে প্লে অফ ম্যাচটা দেখলাম আমরা গত পরশু, তাতে করে মনে হচ্ছে বসুন্ধরার মূল চ্যালেঞ্জ ভারতের এটিকে মোহন বাগানের বিপক্ষেই। অবশ্যই মাজিয়া (মালদ্বীপ) বা ব্যাঙ্গালুরু এফসি’কে সহজভাবে নেয়া যাবে না। তাদের পার করেই শেষ ম্যাচে এটিকে মোহন বাগানের বিপক্ষে মুখোমুখি হতে হবে বসুন্ধরাকে। বসুন্ধরার খেলা ১৮, ২১ ও ২৪ আগস্ট যথাক্রমে মাজিয়া, ব্যাঙ্গালুরু ও এটিকে’র বিপক্ষে। রাইভাল ওয়াচে প্রতিপক্ষগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও সেই সাপেক্ষে তাদের সম্ভাব্য ট্যাকটিক্স আলোচনা করবো, যার প্রথম পর্বে রয়েছে মাজিয়া স্পোর্টস এন্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব।

মাজিয়া স্পোর্টস এন্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব

মালদ্বীপের ২০২০-২১ লীগের চ্যাম্পিয়ন, এই নিয়ে ৩য় বার শিরোপা জিতলো তারা। অপরাজিতভাবে লীগ জেতার পথে ১৪ ম্যাচের ১০টিতেই জিতেছে তারা, ৩৪ গোলের বিপরীতে হজম করেছে ৬ গোল। এশিয়াতে খেলতে যাচ্ছে ৭ম বারের মত। দলটির ঘরোয়া ফুটবলারদের ভেতর উল্লেখযোগ্য ইব্রাহিম মাহুধী, নিয়াজ হাসান ও আসাদুল্লা আবদুল্লাহ যারা বিদেশি খেলোয়াড়দের খুব ভালো সমর্থন দিবে। বিদেশি ৪ জন হচ্ছে- মিরজোখিদ মামাতখানোভ (কিপার, উজবেকিস্তান), জেসাস পোজো (ডিফেন্ডার, স্পেন), তাকাশি ওদাওয়ারা (মিডফিল্ডার, জাপান), কর্ণেলিয়াস স্টিয়ার্ট (ফরোয়ার্ড, সেন্ট ভিনসেন্ট এন্ড দ্য গ্রেনাডাইন্স) । এই ৪ জনের ভেতর ক্যারিবিয়ান দেশটির ফরোয়ার্ড স্টিয়ার্ট হবে তুরুপের তাস।

  • কোচঃ রিস্টো ভিদাকোভিচ (বসনিয়া)

তবে নিঃসন্দেহে, মাজিয়ার মূল শক্তি ডিফেন্ডার হিসেবে এক কালের রিয়াল বেতিস লিজেন্ড- বসনিয়ান কোচ রিস্টো ভিদাকোভিচ। যিনি ২০০৬ বিশ্বকাপ পরবর্তী সার্বিয়া এন্ড মন্টেনিগ্রো দলের সহকারী কোচ হয়েছিলেন দলটির ১ম বিদেশি ও স্প্যানিশ হেড কোচ জাভিয়ের ক্লেমেন্তের সাথে। রিস্টো ফিলিপাইনিজ জায়ান্ট সেরেস (বর্তমান নাম ইউনাইটেড সিটি) এর লিজেন্ডারি কোচ। ৪ বছরের সেরেস অধ্যায়ে দলটিকে হ্যাট্রিক লীগ চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। ২০১৭ এএফসি কাপে আসিয়ান জোনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেরেস তার অধীনেই। ২০১৮ সালের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ প্লে অফে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন রোর কে এওয়ে ম্যাচে হারিয়ে বিদায় করে দিয়েছিল তারা।

বাংলাদেশি ক্লাবের বিপক্ষে এশিয়াতে মাজিয়ার পূর্বের ফলগুলোঃ

  • ২-০ ঢাকা আবাহনী (২০১৭)
  • ২-০ ঢাকা আবাহনী (২০১৭)
  • ২-২ ঢাকা আবাহনী (২০২০)
  • ০-০ ঢাকা আবাহনী (২০২০)

সম্ভাব্য ফর্মেশন ও একাদশঃ রিস্টোর পছন্দ ৪-৩-৩ ফর্মেশনে আক্রমণাত্মক ফুটবল। তবে বসুন্ধরা কিংস এর উইং প্লে এর শক্তিমত্তা বিবেচনায় ৪-৪-২ তে চলে যেতে পারে সে।

মালদ্বীপে বর্তমানে এমন কোন ক্লাব নেই, যারা ওপেন ফুটবলে বসুন্ধরার বিপক্ষে সুবিধা করতে পারবে। ২০১৯-২০ সিজনের লীগ চ্যাম্পিয়ন মাজিয়া প্রি সিজনে থাকা ঢাকা আবাহনীর মত বয়স্ক ও বিপিএল এ হোচট খেয়ে চলা দলকে ২ লেগের কোনটিতেই হারাতে পারেনি, পরের পর্বে কোয়ালিফাই করতে হয়েছে এওয়ে গোলের সুবাদে। নিচে ওয়েল অরগানাইজড হয়ে থাকা ছাড়া ডিফেন্সিভলি সেভাবে কিছু চিন্তা করবে না রিস্টো। সেরেস এ থাকাকালীন রিস্টোর হাতে শ্রোক বা মারানন এর মত যে সকল কোয়ালিটি অপশন ছিল তা মাজিয়াতে নেই। অবস্থাদৃষ্টে, রিস্টোর পূর্ব ইউরোপীয় মেজাজের চির আক্রমণাত্মক ফুটবল তার দলের জন্য কাল হয়ে দাড়াতে পারে। তবে, ১ম ম্যাচ বিবেচনায় যে কোন ধরণের ফল উড়িয়ে দেয়া যায় না, বসুন্ধরাকে মানসিকভাবে সতর্ক থাকতে হবে। খেলায় কোন বোকামি ও আলসেমি না করলে, বসুন্ধরাই জিতে আসবে। ফলে আমার প্রেডিকশন মাজিয়া ১-৩ বসুন্ধরা কিংস।

Previous articleচট্টগ্রাম আবাহনীকে চমকে দিলো রহমতগঞ্জ!
Next articleকিংসলের খেলার অনিশ্চয়তা কাটাতে অনুমতি আনবে বাফুফে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here