সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলে বেশ উত্তাপ ছড়ায় বসুন্ধরা-আবাহনী ম্যাচ। দেশের ফুটবলে বর্তমানে রাজত্ব করা বসুন্ধরা কিংসের সামনে গত মৌসুমে প্রতিরোধই গড়তে পারেনি ঐতিহ্যবাহী আবাহনী। গত মৌসুমে আবাহনীকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতে নিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। এরপর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দুবারের দেখায় প্রথম লেগে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় লেগে ১-১ গোলে ড্র করে আকাশী-নীল জার্সিধারীরা।

২০১৮ সাল থেকে শিরোপার স্বাদ না পাওয়া আবাহনী তাই এবার শিরোপা পেতে একপ্রকার মরিয়া হয়ে আছে। নতুন মৌসুমে তাদের দলবদল সেই ইঙ্গিতই দেয়। গত মৌসুমে আবাহনীতে খেলা চার বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে শুধু মাত্র ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল অগাস্ত এবারও রয়েছেন আবাহনীতে। পাশাপাশি কোস্টারিকার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেসের সাথে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ডরিয়েলটন এবং ইরানিয়ান ডিফেন্ডার মিলাদ শেখকে দলে ভিড়িয়েছে আকাশী নীলরা। এছাড়াও স্থানীয় ফুটবলার ইমন বাবু, নুরুল নাঈম ফয়সাল, সুশান্ত ত্রিপুরা, রাকিব হোসেনদের দলে ভিড়িয়ে শিরোপার স্বপ্ন দেখছে আবাহনী। তবে ম্যাচের পুরো স্পটলাইট থাকবে কোস্টারিকান ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেসের ওপর। বাংলাদেশে ফেরার পর প্রথমবারের মতো নিজের সাবেক ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে মাঠে নামবেন কলিন্দ্রেস।

নিকট অতীতে অনেক সাফল্য পেলেও স্বাধীনতা কাপের ট্রফি যেন আবাহনীর কাছে সোনার হরিণ। সেই ১৯৯০ সালে সবশেষ স্বাধীনতা কাপের ট্রফি জিতেছিল, এরপর থেকে আর ট্রফির ছোঁয়াই পায়নি। সবশেষ ২০১৬ সালে ফাইনাল খেললেও রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ৫ বছর পর তাই আবারও ট্রফি জেতার হাতছানি ধানমন্ডির জায়ান্টদের সামনে। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস।

তবে আবাহনীর শিরোপার স্বপ্ন ভেঙে দিতে প্রস্তুত রয়েছে বসুন্ধরা কিংসও। আবাহনীর পাশাপাশি ইনজুরি সমস্যা বড় দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিংস কোচ অস্কার ব্রুজনের কাছে। ইনজুরির কারণে এরইমধ্যে লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক তপু বর্মন। সেমি ফাইনালে পুলিশ এফসির বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়া ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজও অনিশ্চিত ফাইনালে। এছাড়াও তারিক কাজী, ওবায়দুর রহমান নবাব এবং এলিটা কিংসলেরও কিছুটা ইনজুরিজনিত সমস্যা রয়েছে। তাইতো আবাহনীর বিপক্ষে বড় দায়িত্ব ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রবসন রবিনহোর কাঁধে। পাশাপাশি বসনিয়ান ফরোয়ার্ড স্টোজেন ভার্নজেসকে দিতে হবে অসাধারণ পারফর্ম্যান্স। এই স্বাধীনতা কাপের পারফর্ম্যান্স দিয়ে কিংস সমর্থকদের প্রত্যাশা বাড়াচ্ছেন দেশীয় মতিন মিয়া, ইয়াসিন আরাফাত, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আতিকুর রহমান ফাহাদরা। এখন পর্যন্ত এবারের স্বাধীনতা কাপে প্রতিপক্ষের জালে ১৬ বার বল পাঠিয়েছে বসুন্ধরা কিংস।

এছাড়া মুখোমুখি পরিসংখ্যানেও বেশ এগিয়ে বসুন্ধরা কিংস। এখন পর্যন্ত সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে ৭ বার মাঠে নেমেছে বসুন্ধরা কিংস। এর মধ্যে কিংসের জয় ৪ এবং আবাহনীর জয় মাত্র ১ টি। বাকি ২ ম্যাচ হয়েছে ড্র। গত মৌসুমেও ৩ ম্যাচের মধ্যে ২ ম্যাচেই আবাহনীকে একপ্রকার বিধ্বস্ত করেছে কিংস (৩-১ ও ৪-১)।এছাড়াও আবাহনীর জালে এখন পর্যন্ত ১৪ বার বল পাঠানোর বিপরীতে ৭ বার কিংসের জালে বল পাঠিয়েছে আবাহনী।

পরিসংখ্যানের পাতা ছাপিয়ে দিন শেষে মাঠের খেলাটাই মুখ্য। অতীত সফলতা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে মৌসুমের প্রথম শিরোপা ঘরে তুলবে বসুন্ধরা কিংস? নাকি নিজেদের দীর্ঘ শিরোপা খরা কাটিয়ে নতুন মৌসুমটা শিরোপা জয়ের দিয়েই রাঙাবে আবাহনী লিমিটেড? ম্যাচের আগে দুদলের কোচ এবং ফুটবলাররা মৌসুমের প্রথম শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে বেশ আত্মবিশ্বাসী। দুদলের এই ইতিবাচক মানসিকতাই বলে দিচ্ছে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ধুন্ধুমার এক ফাইনাল উপভোগ করতে যাচ্ছেন দর্শক-সমর্থকরা। তাদের চিন্তা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন, আবাহনী পুনরাগমন নাকি কিংসের রাজত্ব?

Previous articleভারতকে হারিয়ে ফাইনালের পথে বাংলার মেয়েরা!
Next articleকিংসকে বিধ্বস্ত করে স্বাধীনতা কাপের শিরোপার মুকুট আবাহনীর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here