অবনমিত হওয়ার কারণে এই সিজনে বিপিএল খেলতে পারে নি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রত্যাশা ছিলো বিসিএল খেলবে। তবে সেই আশায় গুড়েবালি, ভাগ্যের পরিহাসে বিসিএলে অংশ নিতেও অপারগ প্রায় চার যুগের পুরাতন ক্লাবটি।
গত ২০২২-২৩ ফুটবল মৌসুমে ২২ ম্যাচে মাত্র ১৫ পয়েন্ট নিয়ে বিপিএল মিশন শেষ করে মুক্তিযোদ্ধা। পয়েন্ট তালিকায় তাদের অবস্থান ছিলো দশম স্থানে। এতে করে বিপিএলের নিয়ম অনুযায়ী তারা অবনমনের মুখে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অবনমিত হলেও তবে এখানে বাধ সাধে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি অনুযায়ী এই অবনমনের পিছনে একমাত্র কারণ বাজে রেফারিং। সে অনুযায়ী বাইলজের ধারা শিথিল করে তাদের বিপিএলে পুনরায় খেলার সুযোগ দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলো।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রফেশনাল লীগ ম্যানেজমেন্ট কমিটির নিকট আবেদন জানালেও তারা সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে বাফুফের উপর ছেড়ে দেয়। তবে ফেডারেশন বিপিএলের নিয়মের ব্যাপারে ছিলো পুরোপুরি অনড়। ফেডারেশন মুক্তিযোদ্ধার আবেদনকে আমলে না নিয়ে অবনমিত করে। ফলে বিপিএল থেকে বিসিএলে চলে যায় ক্লাবটি।
সকলের প্রত্যাশা ছিলো বিসিএলে অংশ নিবে। তবে প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণ অপারগতা প্রকাশ করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। বিসিএলের দল নিবন্ধনের আজ শেষদিন থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা নাম নিবন্ধন করেনি। মুক্তিযোদ্ধার দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রসাশক দল নিবন্ধন করতে চায়না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এই প্রসঙ্গে বলেন,
“দলের ম্যানেজার ক্লাব কর্তৃপক্ষকে বুঝানোর চেষ্টা করলেও তাতে কোনো আশার আলো দেখা যায় নি। ম্যানেজারের মতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ একটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। বিসিএলে রেজিস্ট্রেশন না করলে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ম্যানেজার ক্লাব কর্তৃপক্ষের মন গলাতে পারেন নি। বিসিএলে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে ক্লাব কর্তৃপক্ষ বারবার অর্থিক দৈনিতাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন।”
১৯৭৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র। ১৯৮২ সালে ঢাকা দ্বিতীয় বিভাগে অংশগ্রহণে মাধ্যমে বড় পর্যায়ে যাত্রা শুরু করে ক্লাবটি। ৪৫ বছরের দীর্ঘ পথচলায় ক্লাবটির বেশ কয়েকটি অর্জন রয়েছে। দলটি দুইবার ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ এবং তিনবার ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতেছিলো।
আন্তজার্তিক পর্যায়েও ক্লাবটির পদচারণা রয়েছে। আন্তজার্তিক পর্যায়ে দলটি ‘সিকিম গোল্ড কাপ’ এবং ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে কাপ’ এর পাশাপাশি ১৯৯৮ সালে কলকাতায় আয়োজিত ম্যাকডোয়েল কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলো। ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির গৌরবময় ইতিহাস থাকলেও হারিয়ে যাওয়ার শংকায় পড়েছে। এবারের মৌসুমে বিসিএলে অংশ না নেওয়ার কারণে সেই শংকা আরো গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই এভাবেই হারিয়ে গিয়েছিলো ১৯৬৩ গঠিত হওয়া আরেক ঐতিহ্যবাহী ক্লাব টিম বিজেএমসি। মুক্তিযোদ্ধাও কি তাহলে টিম বিজেএমসির পথে হাঁটছে? এবার কি তবে মুক্তিযোদ্ধার পালা?