কথায় আছে যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। ফেডারেশনের তথাকথিত নির্বাচকরা প্রতিভাবান প্রবাসী ফুটবলারদের প্রতি এমন ধারণা অনেক আগে থেকে বহন করে আসছেন। প্রবাসী ফুটবলররা ওইসকল নির্বাচকদের জন্য চক্ষুশূল। এইজন্যই প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও দেশপ্রেমে তাগিদে খেলতে আসা প্রবাসী ফুটবলাররা বলি হয় নির্বাচকদের সিন্ডিকেট নামক মারণাস্ত্রের কাছে। সিন্ডিকেটের নতুন বলির শিকার হলেন ১৮ বয়সী প্রবাসী ফুটবলার ফাহামিদুল ইসলাম।

ফাহামিদুলের জন্ম বাংলাদেশে হলেও বেড়ে উঠেছেন ইতালিতে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ইতালিয়ান ক্লাব সাম্পদোরিয়ার অ-১৭ দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান। দুই বছরের ব্যবধানে ফাহামিদুল একই দলের অ-১৮ এবং অ-২০ দলে ডাক পান। পরবর্তীতে তিনি ইতালির চতুর্থ সারির দল এসসি লিগোর্নাতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি একই লীগের আরেক ক্লাব ওলবিয়া ক্যালসিওতে আছেন।

কোচ হ্যাভিয়ার ক্যাবরেরার সুনজরে পড়ে প্রাথমিক দলে ডাক পেয়েছিলেন ফাহামিদুল। বিভিন্ন মাধ্যমে তার খেলার ভিডিও নজর কেড়েছিলো তার। আরো বছর দুয়েক ধরেই তাকে নজরে রেখেছেন তিনি। তাই বয়সভিত্তিক দলের আগে সরাসরি জাতীয় দলে ডেকেছিলেন। কোচের সেই পদক্ষেপের প্রতিদানও দিয়েছিলেন ফাহামিদুল। গুঞ্জন ছিলো সৌদি আবরে ক্যাম্প চলাকালীন সময়ে তায়েফের স্থানীয় ক্লাব আল ওয়েদাতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে হ্যাট্রটিক করেছিলেন ফাহামিদুল। এছাড়া অনুশীলনে তার ড্রিবলিংয়ের পাশাপাশি বল পজেশন ধরে রাখার দখলদারিত্ব ভক্তদের মনে বড় ধরণের আশা সঞ্চার করেছিলো।

তবে এতো আশা জাগিয়েও কোচ হ্যাভিয়ার ক্যাবরেরার ২৩ জনের মূল দলে জায়গা হয় নি ফাহামিদুলের। আজ বাংলাদেশ দল অনুশীলন ক্যাম্প শেষে দেশে ফিরলেও ইতালিতে ফিরে গিয়েছে ফাহামিদুল। ফাহামিদুলের মূল দলে ডাক না পাওয়ার পিছনে কোচ হ্যাভিয়ার ক্যাবররার কম বয়সকে কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন। ফাহামিদুলকে প্রতিভাবান বলে আখ্যা দিয়েও বয়সের কারণে তাকে বাদ দিয়েছেন।

ক্যাবররা বলেন, “ফাহামিদুল আমাদের সঙ্গে ঢাকায় আসেনি। সে ভারত ম্যাচে থাকছে না। এক সপ্তাহের মতো দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছে। সে খুবই প্রতিভাবান ফুটবলার। দলের অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁর জন্য ভালোই হল। আসলে সে এখনো তরুণ, বাকিদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাঁর আরও সময় লাগবে। যে কারণে সে ইতালি ফিরে গেছে।”

এখানেই প্রশ্নের তৈরি হয়। কোচ ফাহামিদুলকে একদিকে প্রতিভাবান বলেছেন অন্যদিকে বয়সের অজুহাতে বাদ দিয়েছেন। ফাহামিদুলের বেড়ে উঠা ইউরোপীয় ঘরনার ফুটবলের সাথে, খুব কম বয়সে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। লেফট মিডফিল্ডার হলেও লেফট উইংয়ে খেলার সক্ষমতা আছে ফাহামিদুলের কাছে। গোল করানোর পাশাপাশি গোল করতে পারেন এই প্রবাসী ফুটবলার।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সবচেয়ে বড় সমস্যা গোল করতে না পারা। প্রায় প্রতিটি ম্যাচে নিজেদের খোলস ছেড়ে বের হতে পারে না বেঙ্গল টাইগাররা। গত ফিফা উইন্ডো কোচ এবং প্লেয়াররা বড় গলায় গোল করার জন্য আলাদা অনুশীলনের কথা জানালেও মাঠের খেলায় তা করে দেখাতে পারে নি। ভারতের বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেখানে গোল করতে পারাটা ম্যাচের জয়ের অনুপাত পরিবর্তন করে দিতে পারে। গোল যেখানে মূল বিষয় সেখানে ফাহামিদুলের মতো খেলোয়াড়ে জন্য বড় বাধা। তবে এইসকল বয়সের বাধা শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য খাটে। বিশ্বের অন্যসব উন্নত ফুটবল দলে তরুণ ফুটবলাররা জাতীয় দলের নিয়মিত পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে। তাদের কাছে বয়স কোনো পার্থক্য তৈরি করে না, তবে বাংলাদেশে আসলে বয়সই তৈরি করে দেয় বড় ধরনের। এই বাধায় পড়ে ফাহামিদুলের মতো উদীয়মান খেলোয়াড়দের অনভিজ্ঞ এবং সিন্ডিকেটের বরপুত্রদের কাছে নিজের জায়গা হারাতে হয়।

Previous articleইতালি ফিরলেন ফাহমিদুল, চোটে ছিটকে গেছেন সুশান্ত ও পাপন
Next articleফাহমিদুলকে বাদ দেওয়ায় ফুটবলপ্রেমীদের ক্ষোভ, বাফুফে ভবনের সামনে বিক্ষোভ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here