বাংলাদেশের ফুটবলে বেশ পরিচিত একটি নাম ‘শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব‘। স্বাধীনতারও পূর্বে ১৯৬২ সালে ধানমন্ডির একটি খোলা মাঠকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল তৎকালীন ‘ধানমন্ডি ক্লাব‘। এরপর ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামালের নামে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব নামে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল অঙ্গনে খেলতে থাকে ক্লাবটি। গত মৌসুমে ঢাকা আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব, শেখ রাসেলের মতো জায়ান্টদের পেছনে ফেলে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রানার্স আপ হয়ে সবার নজর টেনেছে ক্লাবটি। তবে গত মৌসুমে বেশ কয়েকটি ঘটনায় সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে শেখ জামাল।
মাঝারি মানের দল নিয়েও আবাহনী, সাইফের মতো হেভিওয়েটদের হটিয়ে গত মৌসুমে লিগে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করে শেখ জামাল। জামালের দেশী বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে দারুন সমন্বয় গড়ে তুলেন স্থানীয় কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। তবে দলকে সুবিধাজনক অবস্থানে রাখা সত্বেও লিগের মাঝপথে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ম্যাচের অল্প কিছুক্ষণ আগে কাকতালীয় ভাবে বরখাস্ত হন মানিক। এছাড়াও ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে দর্শক পেটানোর ঘটনায় নিষেধাজ্ঞা ও জরিমানার মুখে পড়তে হয় শেখ জামালের বলবয় ও বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে। তারপরও লিগে রানার্স আপ হয়ে এএফসি কাপের প্লে অফ খেলার সুযোগ পায় শেখ জামাল। তবে ক্লাব লাইসেন্স না থাকায় এএফসি কাপের প্লে অফ খেলার সুযোগ হারায় শেখ জামাল। তাইতো বাংলাদেশের পেশাদার ফুটবলে অন্যতম সফল ক্লাব শেখ জামালের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।
তবে যতই আলোচনা-সমালোচনা হোক না কেনো, ঘরোয়া ফুটবলে শেখ জামালের সাফল্যকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের তিনটি শিরোপা রয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের। এর পাশাপাশি প্রিমিয়ার লিগের পরই যে টুর্নামেন্টের অবস্থান অর্থাৎ ফেডারেশন কাপেরও তিনটি শিরোপার মালিক শেখ জামাল। দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও সাফল্যের সাক্ষর রেখেছে শেখ জামাল। ২০০২ ও ২০১১ সালে নেপাল থেকে বুদ্ধা সুব্বা কাপ ও পোখারা কাপের শিরোপা জয় করে ফেরে শেখ জামাল। এরপর ২০১৪ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত কিংস কাপে চ্যাম্পিয়ন ও একই বছর ভারতের ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট আইএফএ শিল্ডে রানার্স আপ হয় শেখ জামাল। তবে শেখ জামালের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ভারতীয় দর্শকদেরও প্রশংসা কুড়ায়।
গত মৌসুমে শেখ জামালের জার্সিতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড পা ওমর জোবে। জোবের পাশাপাশি আরো দুই গাম্বিয়ান সলোমন কিং ও সুলায়মান সিল্লাহও ছিলেন দুর্দান্ত। এশিয়ান কোটায় উজবেক মিডফিল্ডার ওতাবেকও নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। নতুন মৌসুমের দলে গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড পা ওমর জোবে ছাড়া বাকি তিন বিদেশি ফুটবলারদের এবারও ধরে রেখেছে শেখ জামাল। গত মৌসুমে চট্টগ্রাম আবাহনীতে খেলা নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড চিনেদু ম্যাথিউ এই মৌসুমে যোগ দিয়েছেন শেখ জামালে। স্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যে রায়হান হাসান, ইয়াসিন খানের মতো অভিজ্ঞ এবং আতিকুজ্জামান, রাহবার ওয়াহেদ খান, মোহাম্মদ নাঈম, মিতুল মারমাদের মতো তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারদের দলে ভিড়িয়েছে ক্লাবটি। নতুন মৌসুমের জন্য শেখ জামালের কোচের ভূমিকায় রয়েছেন স্প্যানিশ কোচ হুয়ান মার্টিনেজ সায়েজ। দেখা যাক নতুন মৌসুমে নতুন কোচের অধীনে কতোটা সফল হতে পারে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।