২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে উত্তীর্ণ হয় বসুন্ধরা কিংস। বাংলাদেশের ফুটবলে আগমনের পর থেকেই সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে কিংস। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আসার পর থেকেই ক্লাব নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সাজায় কিংস ম্যানেজমেন্ট। মাঠের খেলায় ভালো ফলাফল করতে দেশীয় সেরা ফুটবলারদের সাথে ভালো মানের বিদেশি ফুটবলার ও কোচদের নিয়ে এখন পর্যন্ত সফলই বলা যায় বসুন্ধরা কিংসকে। সেই সাথে মাঠের বাইরের প্রয়োজনীয় সবকিছু সম্পন্ন করে একটি পূর্ণাঙ্গ পেশাদার ক্লাব হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর ছিলো বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দলটি।

২০১৮-১৯ মৌসুমে বাংলাদেশ ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত সমান ২টি করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ এবং ফেডারেশন কাপের সাথে ১টি স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। পাশাপাশি এএফসি কাপেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনো গ্রুপ পর্ব পেরোনো হয়নি কিংসের। ২০২০ সালের এএফসি কাপের ১ম ম্যাচে মালদ্বীপের ক্লাব টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে ৫-১ গোলের বড় জয় দিয়ে আসর শুরু করলেও করোনায় বাতিল হয়ে যায় পুরো আসরটি। এরপর সবশেষ মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত এএফসি কাপের গ্রুপ ডি এর লড়াইয়ে অংশ নিয়ে অপরাজিত থেকেও সামান্য পয়েন্টের ব্যবধানে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে পৌঁছাতে পারেনি বসুন্ধরা কিংস।

বসুন্ধরা কিংস মানেই যেনো চমক। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আগমনের পর থেকে দেশীয় তারকা ফুটবলারদের পাশাপাশি হাই প্রোফাইল বিদেশি ফুটবলার দলে টেনে সবার নজর কেড়েছে কিংস। নিজেদের প্রথম মৌসুমেই ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকান ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিন্দ্রেসকে দলে নিয়ে পুরো দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে বসুন্ধরা কিংস। এরপর লিওনেল মেসির সাথে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে খেলা হার্নান বার্কোসকে দলে নিয়ে বাংলাদেশ তো বটেই পুরো দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। নিজের প্রথম ম্যাচে ৪ গোল করে আস্থার প্রতিদান দিলেও করোনায় এএফসি কাপ ও ঘরোয়া মৌসুম বাতিল হয়ে যাওয়ায় আর বার্কোস ম্যাজিক দেখা হয়নি বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীদের। এছাড়াও লেবাননের জাতীয় দলের ফুটবলার জালাল কদোহ, তাজিকিস্তান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আখতাম নাজরভ, কিরগিজস্তান জাতীয় দলের ফুটবলার বখতিয়ার দুশোভেকবরাও খেলে গিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের হয়ে। বর্তমান দলে বিদেশি কোটায় বসুন্ধরা কিংসে ইরানিয়ান ডিফেন্ডার খালেদ শাফেঈর সাথে রয়েছেন দুই ব্রাজিলিয়ান রবসন রবিনহো ও জোনাথন ফার্নান্দেজ এবং বসনিয়ান ফরোয়ার্ড স্টোজান ভ্রানিয়াস।

স্থানীয় ফুটবলারদের মধ্যে জাতীয় দলের সিংহভাগ ফুটবলারই বসুন্ধরা কিংসের ডেরায়। আনিসুর রহমান জিকো, তপু বর্মন, বিশ্বনাথ ঘোষ, তারিক কাজী, সোহেল রানা, এলিটা কিংসলে, সুমন রেজা, মতিন মিয়া, বিপলু আহমেদ, মোঃ ইব্রাহিম, ইয়াসিন আরাফাত, মেহেদি হাসান মিঠু, মাহবুবুর রহমান সুফিল, ওবায়দুর রহমান নবাবদের নিয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী স্কোয়াড বসুন্ধরা কিংসের। তবে ইনজুরি বড় দুশ্চিন্তার কারণ কিংস কোচ অস্কার ব্রুজনের জন্য। এরইমধ্যে ইনজুরিতে লম্বা সময়ের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক তপু বর্মন। এছাড়া স্বাধীনতা কাপের সেমি ফাইনালে ইনজুরিতে পড়া ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজকে নিয়ে শঙ্কা এখনো কাটেনি। তাইতো কমলাপুরের বিপজ্জনক টার্ফে খেলবে না জানিয়ে ফেডারেশন কাপ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় বসুন্ধরা কিংস। অবশ্য এর জন্য ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা ও পরবর্তী মৌসুমের ফেডারেশন কাপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কিংসকে। এর আগে স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে ঢাকা আবাহনীর কাছে ৩-০ গোলের হারে মৌসুম শুরুটা ভালো হয়নি বসুন্ধরা কিংসের।

তারপরও নতুন মৌসুমে নতুন উদ্যমে মাঠে নামতে প্রস্তুত বসুন্ধরা কিংস। প্রথম বাংলাদেশী ক্লাব হিসেবে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বসুন্ধরা কিংস। নিজেদের হোম ভেন্যুতে নিজস্ব দর্শকদের সামনে নিশ্চয়ই ভালো ফুটবল উপহার দিতে চাইবে অস্কার ব্রুজনের শিষ্যরা। এর পাশাপাশি ২০২৩ এএফসি এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্লে অফ খেলার সুযোগ পেতে এই মৌসুমে লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বিকল্প নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এশিয়ার মঞ্চে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আগানো বসুন্ধরা কিংস নিশ্চিতভাবেই এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবে না। দেখা যাক নতুন মৌসুমে নিজেদের স্টেডিয়ামে ম্যাচ আয়োজন করে মাইলফলকই স্পর্শ করতে যাওয়া বসুন্ধরা কিংস মাঠের খেলায় কতোটা সফল হতে পারে।

Previous articleবিপিএলের শিরোপা রেসে থাকবে তো শেখ জামাল?
Next articleফর্টিজের মাঠে জাতীয় দলের ক্যাম্প করতে চান ক্যাবরেরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here