আরেফিন জিসান: করোনা পরিস্থিতি, বাংলাদেশে চলমান লকডাউন ও এএফসি কাপের প্লে অফের ম্যাচ নিয়ে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের নানান সমস্যার কথা বিবেচনায় নিয়ে আবাহনীকে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে এএফসি কাপের সাব কমিটি। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেশের ফুটবল সমর্থকদের ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে এএফসি কাপ হতে আবাহনীর বাদ পড়া দেশের ফুটবলে এক আশীর্বাদ।

এএফসি কাপের প্লে অফে ঢাকা আবাহনীর প্রথম খেলা ছিল মালদ্বীপের ঈগলস ক্লাবের বিপক্ষে। ঈগলস বর্তমানে তাদের লীগে রেলিগেশন জোনের কাছাকাছি। ২০১৭ সাল হতে মালদ্বীপের ক্লাবের বিপক্ষে এএফসি কাপে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর টানা ৬ পরাজয়ের ইতি টেনেছিল মারিও লেমোসের আবাহনী। ২০২০ সালের এএফসি কাপ প্লে অফে তাদের লীগ চ্যাম্পিয়ন মাজিয়ার বিপক্ষে দুই লেগের উভয়টিতেই ড্র করেছিল তারা। এওয়্যে গোলের সুবাদে মাজিয়া ফাইনাল প্লে অফে পৌঁছে সেখানে ভারতের ব্যাঙ্গালুরু কে টাইব্রেকারে পরাজিত করে গ্রুপ পর্বে পৌছায়।

মারিও লেমোসের কোচ হিসেবে সক্ষমতা সুবিদিত, সেটা নিয়ে লিখতে আলাদা ফিচার লাগবে। আবাহনীর একপ্রকার বয়স্ক ও আনফিট স্কোয়াডকে দারুণভাবে টেনে চলেছেন। ঈগলসের বিপক্ষে তার আবাহনীই পরিষ্কার ফেভারিট ছিল। তাদের বিপক্ষে জিতলে ফাইনাল প্লে অফে ব্যাঙ্গালুরু, যারা কিনা নিজেদের চূড়ান্ত দাপটের দিনগুলোর তুলনায় বর্তমানে স্রেফ ছায়া হয়ে আছে- তাদের বিপক্ষে এক ম্যাচের প্লে অফে যে কোন ফলই আসতে পারতো। এছাড়াও কোনভাবে আবাহনী যদি মূল পর্ব তথা গ্রুপ স্টেজে কোয়ালিফাই করে ফেলতো, অবশ্যই খুব ভালো দেখাচ্ছে ছবিটা- ২০১৬ সালে এএফসি কাপে আবার খেলা শুরুর পর এই প্রথম বাংলাদেশি দুটি ক্লাব একসাথে একই আসরের গ্রুপ পর্যায়ে খেলছে।

কিন্তু একটি ব্যাপার রয়েছে, একটি সুযোগ, বিশাল একটি সুযোগ! ১৯৯১ সালের পর এশিয়ার সেরা ক্লাব প্রতিযোগিতায় খেলবার একটা দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশী ক্লাবের। এএফসি’র একটি ক্লাব র‌্যাংকিং রয়েছে। সেখানে এশিয়ার সেরা ক্লাব ফুটবলের আসর ‘এএফসি চ্যাম্পিয়নস লীগ’ তথা এসিএল এর ২০২৩ সালের আসরের গ্রুপ পর্যায়ে স্লট পেতে আমাদের লড়াই মূলত ভারত ও তাজিকিস্তানের সাথে। র‌্যাংকিং এর নিয়ম অনুযায়ী, কোন দেশ যত পয়েন্ট অর্জন করবে, সেই পয়েন্ট উক্ত আসরের গ্রুপ পর্যায়ে দেশটির প্রতিনিধিত্বকারী ক্লাব সংখ্যা দ্বারা ভাগ হয়ে র‌্যাংকিং এ যোগ হবে।

ধরুন, গ্রুপে বসুন্ধরা কিংস এবং আবাহনী উভয়েই আছে। দুই দলই ২টি করে জয় সাথে নিজেদের মধ্যকার ম্যাচটি ড্র হলো। তো ৪টি জয়ে ১২ পয়েন্ট এবং নিজেদের ভেতর ড্রতে ১ পয়েন্ট, সব মিলিয়ে ১৩ পয়েন্ট। ২ দ্বারা ভাগ হয়ে আমরা রেংকিং পয়েন্ট পেলাম, ৬.৫। শুধু বসুন্ধরা থাকলে- ২ জয়, ১ ড্র তেই তারা এনে দিতে পারবে ৭ পয়েন্ট। হিসাব এখানেই শেষ নয়। গ্রুপে ২টি দল থাকলে, নকআউটের অর্জিত পয়েন্টও ভাগ হবে। কিন্তু শুধু বসুন্ধরা থাকলে, যদি তারা নকআউটে কোয়ালিফাই করে এবং সেখানেও পয়েন্ট পায়- তাহলে অর্জিত পয়েন্ট ভাগ না হয়ে সরাসরি রেংকিং এ যোগ হবে। এখন, আপনি অবশ্যই আশা করবেন না, বসুন্ধরা ও আবাহনী উভয়েই গ্রুপ পর্যায়ে একই সাথে সব ম্যাচ জিতবে। কলকাতার ক্লাবগুলোর বিপক্ষে এশিয়ান পর্যায়ে ১০ ম্যাচে কোন জয় নেই আমাদের, ৫টি পরাজয়ের পাশে ৫টি ড্র।মালদ্বীপের লীগ চ্যাম্পিয়ন এবং আসরের স্বাগতিক মাজিয়া।

মোহন বাগানের কোচ আন্তনিও হাবাসকে বাংলাদেশের অনেকেই চেনে। এশিয়ান পর্যায়েও তার দক্ষতা প্রমাণের সুযোগ হলো। মাজিয়ার কোচ রিস্টো ভিদাকোভিচ এশিয়াতে ফিলিপিনো ক্লাব সেরেস’র উত্থানের নায়ক। তার অধীনে সেরেস এসিএল প্লে অফে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ান ক্লাবকে হারিয়ে এসেছিল। হাবাস আর রিস্টো উভয়েই বাংলাদেশের ক্লাবের বিপক্ষে ২টি করে ৪ ম্যাচ হারবে তা ভাবা অবান্তর। অতএব, একটি ক্লাব থাকাই ভালো এবং এসিএল এর হাতছানির সামনে তারা সম্ভাব্য সেরা ফলটাই আনবে সেই আশাবাদ ধরে রাখি আমরা সকলেই।

২০১৯ এএফসি কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়ে ঢাকা আবাহনী যত পয়েন্ট অর্জন করেছিল, লেবাননের আল আহেদ চ্যাম্পিয়ন হবার পরও লেবানন একই পয়েন্ট পেয়েছিল। কারণ গ্রুপ পর্বে লেবাননের ২টি ক্লাব ছিল। ঢাকা আবাহনীর সমর্থকদের হতাশ হবার কিছু নেই। ঢাকা আবাহনী ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে নিশ্চিত এসিএল এর প্লে অফে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে ২২ বছর পর ২০২৩ সালে। ধন্যবাদ ক্লাবটিকে তাদের ২০১৯ এএফসি কাপের ফলাফলের জন্য। যদি বসুন্ধরাও আবাহনীর মত ফল দেখিয়ে পয়েন্ট যোগ করে এসিএল এর গ্রুপ স্টেজে কোয়ালিফাই করিয়ে দিতে পারে আমাদের, সেক্ষেত্রে ২০২২ সালের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ জয় করে বাংলাদেশ হতে এসিএল এর সেই স্লটটা নেবার সুযোগ থাকছে যে কোন ক্লাবেরই।

Previous articleশেখ জামালের সহজ জয়!
Next article৩১ মে থেকে শুরু বিসিএল এর দ্বিতীয় পর্ব!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here