খেলাধুলা নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেদের মধ্যে আগ্রহ, ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। বিশেষ করে ক্রিকেট আর ফুটবল তো বাঙালি জাতির রক্তেই মিশে গেছে। ‘ক্রীড়াপাগল‘ জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই খেলাধুলার অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু যেই মাঠে হবে খেলা, হবে খেলার চর্চা, অনুশীলন তার জন্য পর্যাপ্ত মাঠই তো নেই বাংলাদেশে! তাহলে কিভাবে তৃণমূল থেকে উঠে আসবে নতুন প্রতিভা? আর কারাই বা ভবিষ্যতে ক্রীড়াঙ্গনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে?

বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে ক্রিকেটকে নির্বাচন করতে আপনি দুবার ভাববেন না। বর্তমান সময়ে পারফরমেন্সের মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে বাংলাদেশ। মাঠের বাইরে সাংগঠনিক ভাবেও বেশ সফল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বর্তমানে বিসিবির কোষাগারে জমা আছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। তারপরও মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছাড়া আর কি কিছু আছে বিসিবির? মাঝে বিচ্ছিন্ন ভাবে সিলেট ও চট্টগ্রামে কিছু ম্যাচ আয়োজিত হলেও দেশের ক্রিকেটটা যে একেবারেই মিরপুরকেন্দ্রিক। দেশে যে ক্রিকেট মাঠ নেই তেমন কথাও কিন্তু না। উল্টো অযত্নে-অবহেলায় দিনদিন নষ্ট হচ্ছে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম, বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের মতো একসময়ের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামগুলো। তাইতো ফুটে ওঠে অভাবটা আসলে মাঠের নয়, মাঠের সঠিক পর্যবেক্ষণের!

এইতো গেলো ক্রিকেটের কথা, ফুটবলে তো অবস্থাটা আরো করুণ। এক বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামই ছিল দেশের ফুটবলের একমাত্র ভরসা। তবে এবার বড় ধরনের সংস্কার কাজের জন্য বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে এবছরের জন্য আর পাচ্ছে না বাফুফে। আর এতেই যেন ঘোর বিপদের মধ্যে পড়েছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ২০২১-২২ মৌসুমের প্রথম দুই টুর্নামেন্ট কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আয়োজন করলেও তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার সুযোগ নেই বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির। কেননা কমলাপুরের মেয়াদোত্তীর্ণ টার্ফ ফুটবলের জন্য কতোটা উপযোগী সেটা নিয়ে অনেক অনেক প্রশ্নের জায়গা থেকেই যায়। মাঠ নিয়ে অসঙ্গতি জানিয়ে তো বসুন্ধরা কিংস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও উত্তর বারিধারা ফেডারেশন কাপ থেকে নিজেদের নামই প্রত্যাহার করে নেয়।

এবার বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগেও ভেন্যু নিয়ে জটিলতায় পেশাদার লিগ কমিটি। প্রিমিয়ার লীগের এই আসরে সাতটি ভেন্যুতে ফুটবলের রং ছড়ানোর কথা ছিলো। কিন্তু তাতে বাগড়া দিলো কোভিড-১৯ এর পুনরায় উর্ধ্বগতি। পুনরায় করোনায় আক্রান্তের হার হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় সাত থেকে কমিয়ে ভেন্যুর সংখ্যা করা হয় চার। মূলত ঢাকার আশপাশে ম্যাচ আয়োজন করতে চায় ফেডারেশন। পরবর্তীতে ভেন্যুর সংখ্যা আরো দুইবার পরিবর্তন করা হয়,যাতে করে বর্তমানে ভেন্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুইয়ে। এছাড়া দুইটি ভেন্যুর মধ্যে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার স্টেডিয়াম নিয়েও দেখা দিচ্ছে জটিলতা। এই স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নিজেদের ঝালিয়ে নেয় বাংলাদেশের আর্চাররা। এবার মাত্র দুইটি ভেন্যুতে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, তাই মুন্সিগঞ্জের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের মতো সমান ম্যাচের শিডিউল থাকবে টঙ্গীর এই স্টেডিয়ামেও। এতে করে আর্চারদের অনুশীলন ও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটবে। ভেন্যু বাতিল হতে হতে মাত্র ২টি নিশ্চয়ন হয়েছে,তার মধ্যে আবার টঙ্গীর স্টেডিয়াম নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা। সব মিলিয়ে যেনো ভেন্যু সংকটে বাংলাদেশের ফুটবল। তবে আসলেই কি তাই? দেশে কিন্তু ফুটবল মাঠের সেই অর্থে অভাব নেই। সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, রাজশাহী, নীলফামারীর মতো অসংখ্য ফুটবল স্টেডিয়াম রয়েছে দেশে। শুধু প্রয়োজন ঢাকার গণ্ডি পেরিয়ে এসব মাঠগুলো ব্যাবহারের সদিচ্ছা। এবার না হয় করোনার দোহাই দেওয়া যাচ্ছে, কিন্তু বিগত বছরগুলোতেও ওই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ছেড়ে খুব একটা বেরোতে চায়নি বাফুফে ও বাংলাদেশের ক্লাবগুলো।

তাইতো ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও সেই অর্থে নেই মাঠের সংকট, আছে ব্যাবহারের ইচ্ছা ও আগ্রহের। এই জায়গায় যেনো দেশের জনপ্রিয় দুই খেলার বড্ড মিল। আর এই মিলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। আর রাজধানীর গণ্ডি পেরোচ্ছে না খেলাধুলার মূল আসর সমূহ। যেনো রাজধানীর উন্নতি মানেই দেশের উন্নতি। আর এতো কিছুর চাপ নিতে নিতে রাজধানীটাও হয়ে পড়ছে বড্ড ক্লান্ত। তাইতো দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য পেতে খেলাধুলাকে শুধুমাত্র রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। সারাদেশের পরিত্যক্ত স্টেডিয়ামগুলো সংস্কার করে খেলা আয়োজনের মাধ্যমে জাগিয়ে তুলতে সারাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে। আর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমেই এগোবে দেশের ক্রীড়াঙ্গন, সাথে দেশও!

Previous articleশুরুর একদিন আগেও ভেন্যু জটিলতার মধ্যে বিপিএল!
Next articleবিতর্কিত পেনাল্টিতে স্বাধীনতার জয়যাত্রা শুরু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here