ভারতের বিপক্ষে স্কোর লাইন ১-১ হওয়াটাই প্রাপ্তি। কিন্তু সেখানে এক গোলের পিছিয়ে থাকার পর এক লাল কার্ডে দশজনের দল নিয়ে ম্যাচে ফেরা যেন আরও বড় প্রাপ্তি। স্কোর লাইনের কথা বাদ দিলেও এই ম্যাচে দেখা যায় এক অন্য বাংলাদেশকে। যে দলের কথা কোচ অস্কার ব্রুজন ম্যাচের আগেই বলেছিলেন। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, শুধু ডিফেন্স না করে বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে কাউন্টার ফুটবল খেলে দর্শকদের মন জয় করেছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলাররা।

কথা রেখেছেন অস্কার ব্রুজন। কথা রেখেছেন জামাল ভুঁইয়া। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে পেনাল্টি নিয়ে বিদ্রুপ করা ভারতীয় কোচকে যেনো পারফরম্যান্সের মাধ্যমেই জবাব দিলো বাংলাদেশ। মালদ্বীপের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট ভারতের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে তারা।

ম্যাচের শুরুতেই নিজেদের কাছে বল রেখে বিল্ড আপ ফুটবল খেলতে থাকে ভারত। ম্যাচের ২৬তম মিনিটেই ভারতকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। বাম প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়া লিস্টন কোলাচোর কাট ব্যাক থেকে ডান পায়ের শটে বাংলাদেশের জাল কাপান ভারতীয় অধিনায়ক। তবে গোল খেয়েও রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েনি বাংলাদেশ। গোল হওয়ার পরের মিনিটেই মতিন মিয়ার কাট ব্যাক থেকে বা পায়ের শট নেন বিপলু আহমেদ। অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় বিপলুর শটটি। এরপর ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে বিশ্বনাথ ঘোষকে কাটিয়ে ডান পায়ের শট নেন ভারতীয় উইঙ্গার লিস্টন কোলাচো। তবে প্রস্তুত ছিলেন গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো। লিস্টনের শট সরাসরি গ্লাভসবন্দী করে বাংলাদেশকে বিপদমুক্ত করেন জিকো।

এরপর প্রথমার্ধের সেরা সুযোগটি পায় বাংলাদেশ। কুইক কাউন্টার অ্যাটাকে দ্রুতগতিতে ভারতের বক্সে ঢুকে পড়েন সাদ উদ্দিন। এরপর অনেকটা ফাঁকায় থাকা বিপলুকে বল বাড়ান এই উইঙ্গার। বিপলুর ডান পায়ের প্লেসিং শট বাম দিকে ঝাঁপিয়ে বাংলাদেশকে গোলবঞ্চিত করেন ভারতের গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু। প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় ভারত।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ডান পায়ের শট নেন লিস্টন কোলাচো। তবে তার শট চলে যায় অনেকটা উপর দিয়ে। ম্যাচের ৫০তম মিনিটে গোল করার সুবর্ন সুযোগটি পায় বাংলাদেশ। ফাঁকা পোস্ট পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন রাকিব হোসেন। তবে ৫৫তম মিনিটে সবচেয়ে হতাশার খবরটি পায় বাংলাদেশ। লিস্টন কোলাচোকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন রাইট ব্যাক বিশ্বনাথ ঘোষ। ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার পরও একবারও রক্ষণাত্মক হয়নি বাংলাদেশ দল। ৫৯তম মিনিটে একক প্রচেষ্টায় ভারতের বক্সে ঢুকে পড়েন মতিন মিয়া। তবে সময়মত পোস্টে শট নিতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। ম্যাচের ৬০তম মিনিটে ডাবল সেভ করে বাংলাদেশকে গোল খাওয়ায় হাত থেকে রক্ষা করেন গোলকিপার জিকো।

ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসান তরুণ ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাত। জামাল ভুঁইয়ার কর্নার থেকে ব্যাক হেড করেন রাকিব হোসেন। ফলে দূরের পোস্টে থাকা ইয়াসিন আরাফাত পেয়ে যান ফাঁকা পোস্ট। আর ফাঁকা পোস্টে ডাইভিং হেডারে ম্যাচে সমতা ফেরান এই তরুণ ফুটবলার। এরপর দুই বদলি ফুটবলার সুমন রেজা এবং মাহবুবুর রহমান সুফিল গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। তবে সুমনের বাড়ানো বল অল্পের জন্য নাগাল পাননি সুফিল। এরপরের মিনিটেই বড় বাঁচা যেন বেঁচে যায় বাংলাদেশ, মানবীর সিংয়ের জোড়ালো শট হেড করে বিপদমুক্ত করেন তপু বর্মন। বারবার বাংলাদেশের ডি বক্সে হামলে পড়ে ভারত, কিন্তু তপু-তারিক-ইয়াসিনদের প্রতিরোধে হতাশই হতে হয় সুনীল ছেত্রীদের। শেষ পর্যন্ত ১-১ সমতায় শেষ হয় ম্যাচ।

এই ম্যাচের লড়াকু পারফরম্যান্স নিশ্চয়ই বাকি ম্যাচগুলোতে ভালো পারফর্ম করতে আত্মবিশ্বাস যোগাবে। পরবর্তী ম্যাচে আগামী ৭ অক্টোবর স্বাগতিক মালদ্বীপের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।

Previous articleসুনীলকে আটকেই ফলাফল বের করতে চান ব্রুজন
Next articleনিজেকে ভাগ্যবান বললেন ইয়াসিন; দলের খেলায় খুশি অস্কার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here