দীর্ঘ সময় বাংলার ফুটবলকে অধরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উপহার দিয়েছে নারী ফুটবল দল। ২০২২ সালে নেপাল থেকে সাফ জয় করে ফেরে বাঘিনীরা। কিন্তু দেশকে এতবড় অর্জন উপহার দিলেও প্রাপ্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয় নারীরা। বারবার আশা দিয়েও মেয়েদের জন্য প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করতে পারেনি বাফুফে। তাই বাফুফে ভবনে থেকে অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ ছিল সাফজয়ী মেয়েরা।

একে তো জাতীয় দলের খেলা নেই তার সঙ্গে মেয়েদের লিগও মাঠে গড়ায়নি। তাই বাফুফের কাছে বেতনের দাবি জানায় সাবিনা-সানজিদারা। গত বছর ১৬ আগস্ট বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ৩১ জন নারী ফুটবলারের সঙ্গে ৬ মাসের জন্য চুক্তি করে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর শুরু হওয়া সেই চুক্তি শেষ হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। চুক্তির প্রথম ৬ মাসের বেতন পেয়েও গেছেন নারী ফুটবলাররা। এখন নতুন করে চুক্তি নবায়ন হচ্ছে। নতুন চুক্তিতে কয়েকজন নতুন খেলোয়াড় যুক্ত হচ্ছেন। বাদ পড়ছেন ২ জন।

বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার জানিয়েছেন, আগের চুক্তিতে দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে থাকা উন্নতি খাতুন ক্যাম্পে যোগ দেননি। স্বাভাবিকভাবেই তিনি বাদ পড়ছেন। সেই সাথে পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়বেন আরেকজন। নতুন করে চুক্তিতে আসবেন ৬ জনের মতো। আগে ছিল ৩১ জন। নতুন চুক্তিতে মোট সংখ্যাটা হতে পারে ৩৫।

চুক্তিতে খেলোয়াড় বাড়লেও বাড়ছে না টাকার পরিমাণ। তবে বাড়বে ক্যাটাগরি। আগের ৩ ক্যাটাগরি থেকে বেড়ে এবার ক্যাটাগরি হবে ৫টি। আগের ৩ ক্যাটাগরিতে বেতন ছিল যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা। এবার এর সঙ্গে ১০ হাজার এবং ২০ বা ২২ হাজারের নতুন দুটি ক্যাটাগরি যুক্ত হচ্ছে। পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে মেয়েদের ক্যাটাগরি পরিবর্তন হবে। কেউ নিচের ক্যাটাগরিতে চলে যাবেন, কেউ ওপরে উঠবেন। যারা নতুন করে চুক্তির আওতায় আসছেন তারা অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে নজর কেড়েছেন।

চুক্তির প্রথম ৬ মাসে সময়মতো মেয়েদের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি বাফুফে। স্পন্সরদের কাছ থেকে অর্থ এনে মেয়েদের বেতন দিয়েছে বাফুফে। যে কারণে, মাঝেমধ্যে বেতন দিতে বিলম্ব হয়েছে। তবে চুক্তি নবায়নের পর সাবিনা-সানজিদাদের বেতন দিতে বাফুফের আর সমস্যা হবে না। কারণ, বাফুফে এখন ফিফার অনুদান থেকে মেয়েদের বেতন দিতে পারবে। আগে ফিফার অনুমোদন ছিল না। বাফুফের আবেদনে ফিফা তাদের অনুদান থেকে মেয়েদের বেতন দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। তাই আপাতত মেয়েদের বেতন দেওয়া নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা থাকছে।

আগের চুক্তিতে ৫০ হাজার টাকা করে বেতন পেয়েছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন সহ জাতীয় দলের ১৫ জন সিনিয়র খেলোয়াড়রা। ৩০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন অনুর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়ক আফেইদা খন্দকার সহ ১৩ ফুটবলার ও ১৫ হাজার করে পেয়েছেন ২ জন ফুটবলার। এবার তাদের সঙ্গে নতুন ২ ক্যাটাগরিতে নতুন ৬ জন সহ মোট ৩৫ জনকে নতুন করে ৫ ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করে বেতন কাঠামোর আওতায় আনা হবে।

বয়সভিত্তিক সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ মাতিয়ে বাফুফের বেতন কাঠামোর আওতায় যুক্ত হচ্ছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মোসাম্মাৎ সাগরিকা, মুনকি আক্তার এবং অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ইয়ারজান বেগম, অপির্তা বিশ্বাস, সুরভী আকন্দ প্রীতি ও থুইনুয়ে মারমা। নতুন ৬ জনের সাথে বাফুফের চুক্তি হবে এই আগের ২৯ জনের সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চুক্তি নবায়ন হবে। শুধু কয়েকজনের ক্যাটাগরি পরিবর্তন হবে।

তবে মেয়েরা আর্থিক নিরাপত্তা পেলেও তাদের জন্য সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন, অর্থাৎ ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেওয়া – সেটি নিয়ে বাফুফেকে অবশ্যই ভাবতে হবে। কারণ এখন শুধুমাত্র অনুশীলনে সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে মেয়েদের জাতীয় দল। তাদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা ফেডারেশনকেই করতে হবে। অবশ্য এই মাস থেকে মাঠে গড়াচ্ছে নারী ফুটবল লিগ। যার ফলে অনুশীলনের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার সুযোগ মিলবে মেয়েদের।

Previous articleরাফায়েল টুডু : গোলকিপার থেকে বিসিএলের শীর্ষ গোলদাতা!
Next articleএপ্রিলের শেষ দশকে মাঠে গড়াচ্ছে মহিলা লীগ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here